চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
আমেনা বেগম। বাড়ি বাঁশখালীর জলদিতে। প্রসব যন্ত্রণায় ভর্তি হতে আসেন চমেক হাসপাতালে।
হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ডাক্তারের পরামর্শে নিয়ে যাওয়া হয় ৩৩ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডে।
সেখানেই আয়া ও ওয়ার্ডবয়ের যোগসাজশে দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়েন তিনি। উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে তারা হাতিয়ে নেয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। অথচ এই হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসায় টাকা খরচ হতো দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। শুধু আমেনা বেগমই নন, প্রতিদিন শতাধিক রোগীকে এ দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে ব্যয় করতে হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে অনেক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে। সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার ১৯শে ফেব্রুয়ারি ইয়াসমিন আখতার নামের এক গর্ভবতী আসেন ফটিকছড়ি থেকে। ডাক্তারের পরামর্শে জরুরি বিভাগ, সেখান থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে রেফার করা হয়। ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় রোগীকে। সেই ট্রলি ঘিরে রোগীর অভিভাবকদের নানান প্রলোভনে মুগ্ধ করার চেষ্টা চালায় দালালরা।
একপর্যায়ে ১৩ থেকে ১৫টি ওষুধের নাম লিখে রোগীর ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় তালিকা। এরপর ওই তালিকা নিয়ে নেয় পাশে থাকা আরেক দালাল। সে ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়ে রোগীর ভাইকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার ওষুধ কিনে দেয়।
গরীব মানুষটির কাছে এত টাকা না থাকায় মোবাইল অন্যজনের কাছে বন্ধক দিয়ে ওষুধ নিতে হয়। ওষুধ নিয়ে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে গেলে সেখানেও পিছু নেয় দালালরা।
চমেক হাসপাতালে আয়ার সঙ্গে আছে দালালদের যোগাযোগ। আয়া ওষুধগুলো রোগীর কাছ থেকে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। গর্ভবতীর চিকিৎসা হয় সরকারি ওষুধ দিয়েই। পরে আয়া তার কাছে থাকা ওষুধ দালালের হাতে তুলে দেয় টাকার বিনিময়ে।
শুধু গাইনি বিভাগেই নয়, পুরো চমেক হাসপাতাল জুড়েই দালালের অবাধ বিচরণ। তবে মা ও সন্তানের প্রতি পরিবারের ভালোবাসাকে পুঁজি হিসেবে বেছে নিয়েছে এই দালাল চক্র। এভাবে প্রতিনিয়ত তাদের হাতে জিম্মি হচ্ছে চট্টগ্রামের শত শত রোগী। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ করার যেন কেউ নেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবির সাংবাদিককে বলেন, আমরা হাসপাতালকে দালালমুক্ত করার জন্য পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গঠন করেছি। এছাড়া অসহায় গরীব মানুষের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছি।