ইসলাম | বুধবার, ৬ই জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
মোঃ হারুনুর রশিদ চৌধুরী (সাতকানিয়া) :
সম্প্রতি সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, শিক্ষা, শিখন পদ্ধতি, শিক্ষক এবং শিক্ষিত সমাজের একটি দুঃসময় অতিবাহিত হচ্ছে। পাপী জ্ঞান আর কুশিক্ষা যেন জলোচ্ছ্বাসের ন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে নীতি নৈতিকতা। শিক্ষাগুরুগণ ভুগছেন শ্রদ্ধাহীনতায়। কারণ বিদ্যালয়ে সুশিক্ষার বড়োই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। জাতি অমায়িক উসৃংখলতার দিকে দাবিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ আমরা জানি, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। তবে কেন শ্রদ্ধার যোগ্যরাই আজ লাঞ্ছনার শিকার? কেন আজ শিক্ষার শীর্ষে পৌঁছার পরও জাতি দুর্জন? বুঝা গেল শিক্ষার পাশাপাশি দীক্ষার অপূর্নতা যথেষ্ট রয়েছে। ইহা শিক্ষা নয় বিদ্যা বটে।
বিদ্যা মানে জ্ঞান, শিক্ষা মানে আচরণে পরিবর্তন। সব শিক্ষাই বিদ্যা কিন্তু সব বিদ্যা শিক্ষা নয়; যদি তা কার্যকরী বা বাস্তবায়ন করা না হয়। জ্ঞান যেকোনো মাধ্যমেই অর্জন করা যায়, অধ্যয়ন জ্ঞানার্জনের একটি পন্থা মাত্র। অধ্যয়ন তথা জ্ঞান চর্চা বা বিদ্যার্জন সব সময় শিক্ষার সমার্থক নয়। মাদার তেরেসা বলেছেন, বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করে কি হবে মন আর বিবেক যদি অশিক্ষিত থাকে।
আরেকটি বিষয় পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, পাঠ্য পুস্তক সংকোচনের নামে ধর্মীয় শিক্ষা বিবর্জিত শিক্ষা প্রণয়ন। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম পর্যন্ত বাংলা বই থেকে যে ধর্মীয় অনুচ্ছেদ গুলো বাদ পড়া কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না। ইসলামহীন ইসকন, রবীন্দ্রনাথ রামায়ণসহ হিন্দুত্ববাদের ছড়াছড়ি বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে এ দেশকে। ইসলামে শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো আদম সন্তানকে মানুষরূপে গড়ে তোলা। যে শিক্ষা আত্ম পরিচয় দান করে, মানুষকে সৎ ও সুনাগরিক হিসেবে গঠন করে এবং পরোপকারী, কল্যাণকামী ও আল্লাহর প্রতি অনুরাগী হতে সাহায্য করে, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা।
শিক্ষা মানুষের অন্তরকে আলোকিত করে, অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচিত করে, দূরদর্শিতা সৃষ্টি করে। তাই আল্লাহ তা’আলা বাবা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করে প্রথমে তাঁর শিক্ষা ব্যবস্থা করলেন। যে জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের অন্তর হিংসা, বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে মুক্ত হয়ে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়, তাই ইসলামি শিক্ষা। কাজেই ইসলাম বিবর্জিত শিক্ষা মুর্খতার নামান্তর।
পবিত্র হাদিসে আছে, আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি এরূপ একটি হাদীস তোমাদেরকে শুনাচ্ছি; যা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট শুনেছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের নিদর্শন হলো- ইলম (দ্বীনি জ্ঞান) উঠে যাবে, মুর্খতার প্রসার ঘটবে, ব্যাপক হারে যেনা ব্যভিচার ছড়িয়ে পরবে, মদ্যপান করা হবে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি ৫০ জন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন তত্ত্বাবধায়ক পুরুষ থাকবে। (সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম)
আর অন্যদিকে হযরত আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের পরবর্তীতে এরূপ এক যুগের আগমন ঘটবে, যখন (দ্বীনি) ইলমকে উঠিয়ে নেয়া হবে এবং হারাজ বৃদ্ধি পাবে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! হারাজ কি? তিনি বললেন, ব্যাপক গণহত্যা। (জামে’ আত-তিরমিজি)
পবিত্র হাদিস থেকে বুঝা যায়, পাঠ্য বই থেকে দ্বীনি শিক্ষা উঠিয়ে নেওয়া মানে কিয়ামত সন্নিকট সময়ে দেশ ও জাতিকে ধ্বংসস্তুপে ফেলে দেওয়া। ইসলামকে ব্যাতি রেখে নতুন শিক্ষাক্রম সাজানো মানে নতুন প্রজন্মে হিন্দুত্ববাদ, নাস্তিক্যবাদ কিংবা ধর্মহীন ইলুমিনাতি নামের দাজ্জালি শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। আর তাতে শ্রদ্ধা ভক্তি, মায়া মমতা, স্নেহ বিনয়ী সব লোপ পাবে। ফলে আগামীতে গুরুজনেরা হয়ে উঠবে অসম্মান ও ছাত্রদের অধীনে। সুতরাং একথা জোর গলায় বলতে পারি যে, নৈতিকতা ও সুশিক্ষিত বিনয়ী হতে হলে ইসলাম বান্ধব শিক্ষাক্রম বাধ্যতামূলক।
লেখক:- মোঃ ইউনুস আহমেদ
নির্বাহী পরিচালক:- বাংলার মাটি সাংস্কৃতিক ফোরাম চট্টগ্রাম।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে দেশ-বিদেশের সব খবর সবার আগে জানতে ভিজিট করুন- talashtv24.com