২১/১১/২০২৪ ইং
Home / শিক্ষা / অন্যান্য / জার্সি বিক্রি করে কোটিপতি লিটন রুবেল

জার্সি বিক্রি করে কোটিপতি লিটন রুবেল

নিজস্ব ডেস্কঃ

লিটন রুবেলের ছোটবেলা কেটেছে নোয়াখালী সদরে। স্কুল থেকে ক্রিকেটে হাতেখড়ি। স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে ছাড়তে হয় স্বপ্নের ক্রিকেট। কিন্তু স্বপ্ন তো থেমে থাকে না। পরিবারের সবকিছু গুছিয়ে নিজেকে আবার টেনে আনেন ক্রিকেটে।

এবার গ্রামে নয়, ঢাকার স্বনামধন্য ক্রিকেট ক্লাব খেলাঘর ক্রিকেট একাডেমি দিয়ে ক্রিকেটার হওয়ার যাত্রাটা শুরু হয় তার। ঢাকায় এসে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো হলেও ঢাকা লীগে সিলেক্ট হওয়ার আগ মুহূর্তে ইনজুরি এসে হানা দেয়। করতে হয় অস্ত্রোপচার।

স্বপ্ন যার ক্রিকেট ঘিরে, সেই ছেলে আর ক্রিকেট খেলতে পারবে না। তা ভেবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমন অবস্থায় রুবেলের পাশে দাঁড়ান খেলাঘর ক্লাবের হেড কোচ রুহুল আমিন। রুবেলকে দেওয়া হয় একাডেমির ম্যানেজারের দায়িত্ব। এরপর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে ক্লাবের সহকারী ম্যানেজার হিসেবেও ছিলেন সফল।

একজন ম্যানেজার হিসেবে অনেক সম্মান পাওয়া গেলেও পাওয়া যায় না তেমন অর্থ। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে রুবেলের পক্ষে এভাবে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে ওঠে। তাই উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি ২০১৮ সালের শুরুর দিকে একেবারে ছোট পরিসরে শুরু করেন স্পোর্টস বিজনেস।

সামান্য পুঁজি নিয়ে ‘ডিয়ার ফ্রেন্ডস’ নামে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেন। স্পোর্টস রিলেটেড কিছু জার্সি ও ট্রাউজার দিয়েই পরিচিত হতে থাকেন অনলাইন ব্যবসায়। শুরুর দিকে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা ছিল তার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে রুবেলের ব্যবসা।

সাবেক ক্রিকেটার ও ম্যানেজার পরিচয়ের কারণে খুব দ্রুতই পরিচিত হয়ে ওঠেন রুবেল। জার্সিপ্রেমীদের কাছে লিটন রুবেলের ডিয়ার ফ্রেন্ডস হয়ে ওঠে ভরসার প্রতীক। পণ্যের মান ভালো হওয়ায় ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে আসতে থাকে অসংখ্য মানুষের প্রোডাক্ট রিভিউ। তার জার্সির বিজনেস ছড়িয়ে যেতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

চাকরি আর ব্যবসা একসঙ্গে চালাতে খুব বেগ পেতে হয়। তাই ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে খেলাঘর ক্লাবের ম্যানেজারের চাকরি ছেড়ে দেন। মনোযোগ দেন ব্যবসায়। ভাগ্যের চাকা যখন ঘুরছিল; তখনই হানা দেয় করোনাভাইরাস। সদ্য ভাড়া নেওয়া অফিস এবং নিজের সবকিছু চালিয়ে অক্ষম হয়ে পড়েন রুবেল। তবুও পিছিয়ে পড়তে চাননি।

করোনায় দেশের ই-কমার্স সেক্টরে নতুন বিপ্লব আসে। মানুষ আস্থা রাখতে শুরু করে অনলাইন কেনাকাটায়। এ সুযোগ আর হাতছাড়া হয়নি রুবেলের। এ সময়ে অল্প বিক্রি দিয়ে কোনোরকমে বিজনেস চালু থাকলেও খুব অল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়ান লিটন রুবেল। তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ডিয়ার ফ্রেন্ডস। হাজারো মানুষের আস্থা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে তার জার্সি। ক্রিকেট খেলা অনেক দেশের জার্সি, ট্রাউজার, প্র্যাকটিস জার্সি, ট্রাভেল টি-শার্ট, ক্যাপ, ট্র্যাকস্যুট এখন অনেক জনপ্রিয়। একেবারে হুবহু ডিজাইনের হাই কোয়ালিটির ফেব্রিক্স দিয়ে বানানো ফ্যান ভার্সন পণ্যগুলোর চাহিদা অনেক।

পাশাপাশি ফুটবল খেলা বিভিন্ন দেশের প্র্যাকটিস জার্সি, বিশ্বকাপের জার্সি, ক্লাব ফুটবলের জার্সি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা ইংল্যান্ডসহ সব দলের প্র্যাকটিস কিট, ট্র্যাকস্যুটসহ সব ধরনের কাস্টমাইজড জার্সি পাওয়া যায় ডিয়ার ফ্রেন্ডসে। সম্প্রতি ৩ বছরে পদার্পণ করেছে তার এ অনলাইন বিজনেস।

শূন্য হাতে শুরু করা রুবেল এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি টাকার মত পণ্য বিক্রি করেছেন। তার অনুপ্রেরণায় জার্সির ব্যবসা শুরু করেন আশেপাশের অনেকেই। সবাইকে তিনি সব সময়ই দিয়ে যাচ্ছেন পরামর্শ। কাউকে দিয়েছেন নিজ শপের পণ্যও। হেরে না যাওয়া এ সফল উদ্যোক্তা এগিয়ে যেতে চান অনেক দূর।

এ ব্যাপারে লিটন রুবেল জাগো সাংবাদিককে বলেন, ছোটবেলা থেকেই স্ট্রাগল করে বড় হয়েছি। পরিশ্রম, সততা আর নিষ্ঠা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। কঠোর পরিশ্রম আর সততার সাথে কাজ করলে অবশ্যই ভালো ফল পাওয়া যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

About newsdesk

Check Also

নরমাল ডেলিভারিতে একসঙ্গে ৩ নবজাতকের জন্ম

🕒 চট্টগ্রাম ☰ বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ✒️বিশেষ প্রতিনিধি (লোহাগাড়া) | নিউজ ডেস্ক- তালাশটিভি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *