স্বাধীন-বার্তা | সোমবার ০৬ মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
মোঃ হারুনুর রশিদ চৌধুরী | ‘স্বাধীনতা’ একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি সংগ্রাম। স্বাধীনতার এই মাসে খুব মনে পড়ে ৭১ এর দিন গুলি। অশ্রু বেয়ে বুক ভিজে যায় সেই কালের কাহিনীতে। সন্তান হারা জননী আর পিতা হারা অবুঝ শিশুর ইতিহাসে ঝাপসা হয়ে আসে দু’চোখ। কৃষকের ঘাম ঝরানো ফসল ভোগ করতে না পারা, আম জনতা পায়ে জুতা পড়ে চলতে না পারা, দিন দুঃখীদের পেটে লাথি মেরে এপারের ফসল ওপারে নিয়ে যাওয়া বহু কাহিনীতে হৃদয়টা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যায় নিরবে। আর কত সইবে বাঙ্গালী জাতি দগ্ধ পীড়ন! কতকাল রইবে শোষনের বন্দিশালায়!
তৃষ্ণার্ততায় তখন স্বস্তির জলের পেয়ালা হাতে দাঁড়াল কেউ একজন। শক্ত হাতে গুড়িয়ে দিতে নিল অস্ত্র হাতে। হলেন শোষিত জনতার অভিভাবক। চির অজেয়, অভয়ের বাণী ছিল যার মুখে। দুঃখিনী মায়ের ইজ্জত রক্ষায় ছিলেন আবৃত ডাল। ভীত দিশাহীন ব্যক্তি গুলোকে সাহস যোগালেন, বললেন শোষনের যাঁতাকলে আর নয়; বিদ্রোহ করতে হবে, করতে হবে সংগ্রাম স্বাধিকার ফিরে পেতে। তখন তার হাত ধরে বাংলার দামাল ছেলেরা ঝাপিয়ে পড়লো পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে। বাংলার কৃষক শ্রমিক, শিক্ষিত সমাজ ছাত্রসমাজ তরুণ যুবক সবাই সোচ্চার হয়ে বেরিয়ে এলেন শক্ত হাতে জুলুম রুখতে। ফলে শোষনের মাত্রা আরো তীব্র হয়। পুরুষদের কাউকে জেলে আর কাউকে গুলি করে হত্যা করে। আর রমণীদের উপর চালায় নির্মম নির্যাতন যত্রতত্র।
প্রতি নিয়ত শোনা যায় অস্ত্রের ঝংকার আর জলপাই রঙের ট্যাঙ্কের খাণ্ডবদাহন। সবার মুখে মুখে অমুক পরিবারের সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে। অমুক যুবক শহরে গ্রেফতার হয়ে গেছে, পাশের বাড়ির কেউ নেই, হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে দেশ ছাড়ছে। কারো হাটবাজারে যাওয়া বন্ধ। মাসের পর মাস উপবাস গোটা পরিবার। ঘুম নেই কারো দু’চোখে। এভাবেই অনাহারে-অনাদরে কঠিন পরিস্থিতি চলতে থাকে দীর্ঘ নয়টি মাস। দিবানিশি বাংলার মাটি প্রকম্পিত থাকে পাকবাহিনীর দমন-পীড়ন উৎপীড়নে। দীর্ঘ নয় মাসের মাথায় লাখো বাঙালির তাজা রক্তের বিনিময়ে জাতি পেল একটি সার্বভৌম স্বাধীন ভূখন্ড, একটি ভাষা, পেল স্বাধীকার স্বাধীনতা।
কত মায়ের ইজ্জত গেল আর কত শিশু হামাগুড়ি দিল পিতা-মাতার লাশের উপর তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা। সনাতনী কত বোনের সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল; বিধবা হলো নববধু তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা। গ্রামের পর গ্রাম ছাই হলো, বিভৎস আক্রমণে লাশের স্তুপ পড়লো বস্তির চারপাশে। শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা। কিন্তু আজ বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেল বাস্তব স্বাধীনতা এখনো ঘরে উঠেনি নিরীহ মানুষের। মাজলুম জনতার হৃদয় এখনো সুশোভিত হয়নি মুক্তির রঙে। নাকের ডগায় এখনো আসেনি ভ্রাতৃত্বের সুবাস অনেকের।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24
এখনো দেখা যায় স্বাধীনতা বড় লোকদের দালান কুটাই, রাস্তায় কি বা গায়ের ছোট কুঁড়ে ঘরে পৌঁছেনি। নির্বিশেষে খেটে-খাওয়া মানুষেরা পাইনি মুক্তির সনদ। এখনো শোনা যায় মাজলুমের আর্তনাদ, শোনা যায় গুম খুন ধর্ষণের অপ্রিয় ঘটনা। এখনো ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্ষমতার পালা বদলে আম জনতা হয় তাদের পিশিত মরিচ, খবরের কাগজে লিখা আসে মায়ের বুক থেকে সন্তান কেড়ে নিয়ে হত্যা করা আর স্ত্রীর সামনে স্বামীর লাশ। এখনো শোনা যায়, কুকুরের মতো খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করে স্বজাতি, ফুটপাতে না খেয়ে মারা যায় অবুঝ শিশু। প্রতি নিয়ত শোনা যায়, একদলের কাছে অন্য দলের লোক নিরাপদ নয়। দুর্নীতি চোরা চালানী কালোবাজারি ইত্যাদি থেকে দেশ মুক্ত নয়।
জীবনের মায়া ত্যাগ করে অকাতরে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের আজও অবজ্ঞা ও অপমান করা হয়। সৃতিচারণে নাচ-গানের আসর জমিয়ে কেবলই বাৎসরিক দিবসে ফুল সজ্জা করা কি স্মরণ? নৃত্য করা বাদ্য-বাজনা মদের আসর জমানো কি তাদের অপমান নয়? বিজয়ের মাসে, স্বাধীনতার মাসে কেবল সুন্দর বক্তব্য দেওয়া কবিতা আবৃত্তি উপস্থাপনা শৈলী, ৭১ এর ইতিহাস রচনা করা কখনো সুখকর হতে পারে না।
উদ্যান ও স্মৃতিসৌধসহ বিভিন্ন স্মরণীয় জায়গা সৌকর্য করা এবং বিদ্যালয় সাজিয়ে দৃষ্টি নন্দন করনে কি আন্দোলনী লক্ষ্য হাসিল হবে! যুদ্ধ রক্তের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে তখনকার প্রস্তাবিত বিষয় বাস্তবায়ন করা। সংগ্রাম ছিল আমাদের মুক্তির, স্বাধীনতার; তবে আজ পরাধীনতার শিকলে বাঁধা ৬৮ হাজার গ্রামের বাসিন্দা। মিথ্যা মামলায় হয়রানি, জোর-জুলুমের শেষ কোথায়! দেশজুড়ে চলছে লাঠি যার মাটি তার। উপসংহারে বলি, ‘স্বাধীনতা’ গল্প কথ্য ছন্দ-সুর মাত্র নয়; চাই সংসদ থেকে শুরু করে সব জায়গায় সব মানুষের তরে যথাযথ তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো।
| লেখক :- মোঃ ইউনুস আহমেদ
ফাজেল জামিয়া জিরি মাদরাসা, চট্টগ্রাম।