২১/১১/২০২৪ ইং
Home / X-Clusive / আমার মন পড়ে আছে চট্টগ্রামে : শেখ হাসিনা

আমার মন পড়ে আছে চট্টগ্রামে : শেখ হাসিনা

চট্টগ্রাম | রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ

নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলসহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। এ দেশে আর দারিদ্র্য থাকবে না। এখন আর কাউকে খাবারের জন্য হাহাকার করতে হয় না। গতকাল শনিবার সকালে কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। টানেলের একটি টিউবের পূর্ত কাজের সমাপনীতে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ঢাকায় থাকলেও আমার মন পড়ে আছে চট্টগ্রামে। তিনি গণভবন থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

এদিকে টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে আয়োজিত সুধী সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল আলম চৌধুরী নওফেল, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন বিদেশিদের কাছে হাত পেতে নয়, মাথা উঁচু করে চলবে বাংলাদেশ। করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশও এর থেকে দূরে নয়। তাই আমাদের জমি ও জলাশয়গুলো যেন খালি না থাকে। যাই খালি আছে, সব জায়গা থেকেই উৎপাদন করতে হবে। আমাদের যা আছে তা নিয়েই চলতে হবে। কারও কাছে হাত পাতব না। আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করছি। আপনাদের সকলের নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে চলমান উন্নয়ন কাজের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনোভাবেই উন্নয়নের গতি থামাতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন তারা চোখে দেখে না। তাদের চোখের সমস্যা আছে। সরকার চোখের চিকিৎসায় অনেকগুলো ইনস্টিটিউট করেছে। তিনি তাদেরকে চোখের চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। অবশ্য যারা দেখেও না দেখার ভান করে তাদের কোনো চিকিৎসা নেই। জাতিসংঘের যে এসডিজি পরিকল্পনা সেটা আমরা মাথায় রেখেছি এবং ২০১০ থেকে ২০২০ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আমরা বাস্তবায়ন করেছি। এখন আমাদের পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ। সেজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনার পাশাপাশি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না।

সরকার প্রধান বলেন, হ্যাঁ ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে, অর্থ চোরাচালান করতে পারবে, ওই ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি করতে পারবে। অস্ত্র চোরাচালানি, অর্থ চোরাচালানি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ এগুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করতে পারবে না, এটাই হলো বাস্তবতা। আজকে এমন একটা দিন যেদিন সত্যিই আমি আনন্দিত। কারণ, যে কাজ আমরা শুরু করেছিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজ আজকে সম্পন্ন হয়েছে। এই কাজ সম্পূর্ণ করারই উৎসব আমরা করছি। আর কিছুদিন পর দ্বিতীয় টিউবের কাজও সম্পন্ন হবে এবং পুরো টানেলটাই তখন আমরা উদ্বোধন করব। একটা টিউবের নির্মাণ শেষ হওয়ায় সেটা আমি দেখতে চেয়েছি, আর এটা আমাদের বিরাট অর্জন বলেই আমি মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উন্নয়নের কৃতিত্ব জনগণকে দিয়ে বলেন, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে ২০০৮ সালে এবং টানা তিনবার নির্বাচিত করেছে বলেই আজকে আমরা দেশের উন্নয়নের কাজগুলো করতে পেরেছি। সেজন্য আমি জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাঁর সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনের হাইওয়েকে ৬ লেনের করে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ওই এলাকাটা একটি ডিপ সী পোর্টে পরিণত হচ্ছে। কাজেই সেদিক থেকেও এই অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। কঙবাজার এয়ারপোর্টও আমরা উন্নত করে দিচ্ছি। আমরা মনে করি আমাদের এই টানেল বাংলাদেশের জন্যই শুধু নয়, দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই প্রথম। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল হবে তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীলতা পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে এটা আরো বেশি অবদান রাখবে। প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

‘চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেল হওয়ার পর চট্টগ্রামে এখন আমরা সমীক্ষা শুরু করেছি। এখানে পাহাড়, পর্বত। তারপরেও কোথায় কতটুকু মেট্রোরেল করতে পারি তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। পাশাপাশি অনেকগুলো এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামে আমরা করে দিয়েছি। কাজেই চট্টগ্রামেও যেন মেট্রোরেল হয় সেটাই আমাদের ইচ্ছা। তিনি বলেন, ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ, চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অথবা কঙবাজার সমস্ত এলাকায় একটি বিরাট যোগাযোগের নেটওয়ার্ক আমরা প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি, যা মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে।

মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকালে আমরা যখন চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসলাম তখন তারা রাজি হননি। কিন্তু পরে রাতে খাবার টেবিলে প্রধানমন্ত্রীর ডিপ্লোম্যাটিক দক্ষতায় চীন সরকারকে রাজি করাতে সক্ষম হন। পরে লেটনাইট ডিনার আয়োজনের মাধ্যমে টানেলের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। টানেল বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী ব্ল্যাংক চেক দিয়েছিলেন আমাদের। এত বড় প্রকল্প খুব দ্রুত বাস্তবায়ন হয়েছে। টানেলের বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলোও তাড়াতাড়ি নেওয়া হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছু স্মুথলি শেষ করতে পেরেছি। কোনও অভিযোগ আসেনি। পতেঙ্গা প্রান্তে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, এ বড় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত থাকতে পেরে আমরা গর্বিত। শুধু টানেল নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন বড় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চীনের নাম। কিছুদিন আগে উদ্বোধন করা পদ্মা সেতুতেও জড়িত ছিল চীন। আমি মনে করি, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।

স্বাগত বক্তব্যে সেতু বিভাগের সচিব মোঃ মনজুর হোসেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলটি বাংলাদেশের গর্ব, মর্যাদা এবং একটি মেগা কাঠামো সম্পন্ন করার সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটাবে। টানেলের কারণে সড়ক নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কঙবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কর্ণফুলী টানেল দিয়ে আনোয়ারা ক্রসিং হয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকায় গতি সঞ্চারিত হবে এবং জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান বাড়বে। দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উন্নয়নে এই টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, টানেলের ভেতরের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। শুধু বৈদ্যুতিক লাইন ও কিছু কারিগরি কাজ বাকি আছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দ্রুত কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের প্রথম টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।

টানেলটি পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড (কাফকো) কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার। এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটি টিউবে দু’টি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। ক্রস প্যাসেজগুলো জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার। ভেতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার। টানেলের সাথে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে মোট ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। চীনের এঙ্মি ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। বাকি অর্থ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দিয়েছে। ৬ শতাংশ কাজ বাকি থাকা টানেলটি আগামী জানুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে দেশ-বিদেশের সব খবর জানতে ভিজিট করুন- talashtv24

Print Friendly, PDF & Email

About newsdesk

Check Also

নরমাল ডেলিভারিতে একসঙ্গে ৩ নবজাতকের জন্ম

🕒 চট্টগ্রাম ☰ বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ✒️বিশেষ প্রতিনিধি (লোহাগাড়া) | নিউজ ডেস্ক- তালাশটিভি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *