২২/১২/২০২৪ ইং
Home / অন্যান্য / দুঃসহ দুর্ভোগে চকবাজার-বাকলিয়াসহ নিচু এলাকায় করুণ অবস্থা!

দুঃসহ দুর্ভোগে চকবাজার-বাকলিয়াসহ নিচু এলাকায় করুণ অবস্থা!

চট্টগ্রাম | মঙ্গলবার, ২১শে জুন ২০২২ খ্রিস্টাব্দ

নিউজ ডেস্ক:
ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহনীয় হয়ে ওঠেছে নাগরিক জীবন। গত চারদিনে ভারী বর্ষণের প্রভাবে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও পাহাড় ধস এ বিপর্যয়ের কারণ। প্রকৃতির এ বৈরিতার প্রভাবে গতকাল প্রাণ হারায় চারজন। এর মধ্যে কাতালগঞ্জ ও হালিশহরে বাড়িতে ওঠা পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনজন এবং চশমা হিলে পাহাড় ধসে মারা যায় এক শিশু। এর আগে গত শুক্রবার আকবর শাহ থানায় পৃথক দুই স্থানে পাহাড় ধসে মারা যায় চারজন। সব মিলিয়ে গত চার দিনে আটজন প্রাণ হারায় প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে। অবশ্য গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। বিকেলে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। দিনে বৃষ্টি কম হলেও আগের রাতের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় নিচু এলাকা।

খাল, নালা, সড়ক উপচে পানি ঢুকে যায় বাসা-বাড়িতে। অলি-গলি, দোকানপাট, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং ধর্মীয় উপাসানালয় সবখানেই ছিল পানি। রাস্তাঘাটে কোথাও যানবাহনের জায়গা দখল নেয় নৌকা। এদিকে গত চারদিন পানি ওঠে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বহাদ্দারহাটস্থ বাসায়। পানির জন্য ঘর থেকে বের হতে না পারায় সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব নির্ধারিত একাধিক সভা স্থগিত করা হয়। চসিকের সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সাতটি সভা হওয়ার কথা ছিল। পরে অবশ্য মেয়র নগরের এলাকা নগরীর জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন।

উল্লেখ্য, নগরে বৃষ্টি শুরু হয় গত বুধবার থেকে। শুক্রবার রাতে তা ভারী ভর্ষণে রূপ নেয়। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আমবাগান আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে গতকাল মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, জিইসিসহ আশ-পাশের এলাকায় সকাল প্রায় ১১টা পর্যন্ত হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি দেখা গেছে। এই সময় দীর্ঘ যানজট ছিল জিইসি থেকে বহাদ্দারহাট পর্যন্ত। আগের রাতে পানি বৃদ্ধি পেলে এ যানজট সৃষ্টি হয়। ওই হিসেবে একটানা দীর্ঘ প্রায় ১২ ঘন্টা যান চলাচল স্থবির ছিল জিইসি থেকে বহাদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কে।

এছাড়া গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টা থেকে গতকাল ১১টা পর্যন্ত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে বহাদ্দারহাটমুখী যানবাহন আটকে যায়। ষোলকবহরে ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে প্রায় বুক সমান পানি থাকায় গাড়িগুলো গন্তব্যে যেতে পারেনি। দীর্ঘ এ সময়ে পথেই রাত কাটাতে হয় গাড়ির চালক-হেলপারদের। দূরের অনেক যাত্রীদেরও ভোগান্তি হয়েছে।এদিকে জলাবদ্ধতায় আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, হালিশহর, চকাবাজার, বাদুরতলা, কাগাসগোলা, রহমতগঞ্জ, তিন পুলের মাথা, ওয়াপদা, শান্তিবাগ, আনন্দবাজার, কাট্টলীর বিভিন্ন অংশ, ফইল্যাতলি, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, শুলকবহর এলাকার বিভিন্ন ভবনের নিচ তলায় পানি ঢুকে গেছে।

বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে দেশ-বিদেশের সব তাজা খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24.com

অন্যান্য এলাকার পানি কমলেও ডিসি রোড, চকবাজার, বি এড কলেজ, ফুলতলা, ঘাসিয়া পাড়া, শাহ মুহাম্মদ দরগার লেইন, বহদ্দারহাটের বারইপাড়া ও কাঁচাবাজার সংলগ্ন আবাসিক, খাজা রোড, বাদুরতলা, দেওয়ান বাজার মৌসুমি আবাসিক, কাতালগঞ্জ, দক্ষিণ পতেঙ্গা, উত্তর কাট্টলি হিন্দুর পাড়া, দেওয়ান বাজার খলিফাপট্টি, হালিশহরের শান্তিবাগসহ কয়েকটি এলাকা, পূর্ব বাকলিয়া এলাকায় গতকাল দিনভর পানি ছিল। পূর্ব বাকলিয়ার আব্দুল মান্নান সওদাগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচ তলা গতকাল দুপুরে পানির নিচে ছিল।

কয়েক দিনের জলাবদ্ধতায় অতিষ্ঠ বাকলিয়া ও চকবাজারের অনেক এলাকার লোকজন। আশ্রয় নেন স্বজনদের ঘরে। অনেক জায়গায় ভবন মালিক খালি ফ্ল্যাটে আশ্রয় দিয়েছেন নিচ তলার ভাড়াটিয়াদের। শুলকবহর, চকবাজার মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেইনসহ শহরের নিচু এলাকার বহু ঘরে গত তিন চার দিন ধরে রান্নার চুলাও জ্বলেনি। তাদের রান্না ঘর তলিয়ে যায় পানিতে। পনিবন্দি ওসব এলাকার লোকজন শুকনা খাবার খেয়ে দিন যাপন করেছেন। অবশ্য গতকাল জালালাবাদ, চাঁন্দগাও, পূর্ব ষোলশহর, শুলকবহর, লালখান বাজার, উত্তর আগ্রাবাদ ও দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের অনেক এলাকায় স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে রান্না করা খাবার বিতরণ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।

শাহ মুহাম্মদ দরগার লেইনের বাসিন্দা ও বহদ্দারহাটের হক মার্কেটের দোকান মালিক গণমাধ্যমকে বলেন, পনি নামছেই না। কয়েকদিন ধরে ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। মসজিদের নিচ তলায় পানি ঢুকে গেছে। রবিবার থেকে আমার দোকানে পানি। বেচাকেনা সব বন্ধ। দোকানের মালামাল বাঁচানোই এখন কঠিন হয়ে গেছে।

এদিকে জলাবদ্ধতার অজুহাতে বিভিন্ন সড়কে মর্জিমাফিক অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেছে সিএনজি ও বিভিন্ন পরিবহন চালকগণ। বিশেষ করে রিকশা চালকরা দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া দাবি করে। জলাবদ্ধতা, যানজট এবং বাড়তি ভাড়ার কারণে পথচারীর দুর্ভোগ ছিল চরমে।

Print Friendly, PDF & Email

About newsdesk

Check Also

চবিতে শুরু হচ্ছে ডোপ টেস্ট, পজিটিভ হলে সিট বাতিল

🕒 অপরাধ ☰ বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ✒️নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) | নিউজ ডেস্ক- তালাশটিভি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *