জীবন বাঁচাতে স্কুল-শিক্ষার্থীর তৈরিকৃত অক্সিজেন প্ল্যান্ট!
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১১ই জুন, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
পাবনা প্রতিনিধি:
করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের জীবন বাঁচাতে বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। এ অবস্থায় স্বল্প খরচে মিনি অক্সিজেন প্ল্যান্ট বানিয়েছেন ঈশ্বরদীর এসএম (সাঁড়া মাড়োয়ারি) মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিফ। সম্প্রতি পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিজের তৈরি করা প্ল্যান্ট থেকে অক্সিজেন তৈরি করে দেখায় তারিফ। টানা এক বছরের চেষ্টায় তিনি মেশিনটি তৈরি করেছেন আর এতে খরচ পড়েছে ৬৫ হাজার টাকা।
তারিফ বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় আগে বাবার মৃত্যুর সময় অক্সিজেন সমস্যায় পড়তে হয়। তখন থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়ে যায়। এসব বিষয় মাথায় নিয়েই মূলত কম খরচে অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য কাজ শুরু করি। করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবার আগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস। আহত ফুসফুস বাতাস থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে না। ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এতে করোনা আক্রান্ত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাই করোনারোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেনের বিকল্প নেই।’
নিজের তৈরি প্ল্যান্টে অক্সিজেন উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্বন্ধে তারিফ জানায়, ‘ডায়ানামো দিয়ে বাতাসকে প্রথমে একটি সিলিন্ডারে প্রবেশ করানো হয়। বাতাসে অক্সিজেন ছাড়াও অন্যান্য উপাদান থাকায় সেগুলো বের করার জন্য জিওলাইট ব্যবহার করা হয়েছে। জিওলাইটের মাধ্যমে বাতাস থেকে অক্সিজেনকে একদিক দিয়ে এবং অন্যান্য উপাদানকে আরেকদিক দিয়ে বের করা হয়। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কম খরচের এই প্ল্যান্ট তৈরি করেছে শিক্ষার্থী তারিফ।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার বলেন, ‘তারিফের এ কাজে আমরা সবাই উৎসাহ দিয়েছি। প্রাথমিক সাফল্য এসেছে। এখন ল্যাব টেস্ট করা হবে। ল্যাব টেস্টে দেখতে হবে, তারিকের উদ্ভাবিত প্ল্যান্টে উৎপাদিত অক্সিজেনের মধ্যে বাতাসের অন্য কোনও উপাদান আছে কিনা।’
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিএম ইমরুল কায়েস বলেন, ‘অক্সিজেন ঘাটতি ও এর জরুরি প্রয়োজনীয়তা মাথায় নিয়ে অল্প খরচে প্ল্যান্ট তৈরি করেছে সরকারি এসএম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহের মাহমুদ তারিফ। বলা যায়, বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। কম খরচে প্ল্যান্ট তৈরিতে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারিফের অক্সিজেন ল্যাব পরীক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ল্যাব টেস্টে সাফল্য প্রমাণিত হলে বৃহত্তর পরিসরে এই মেশিনের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।’
বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমি (বিএমএ) পাবনার সাধারণ সম্পাদক ডা. আকসাদ আল মাসুর আনন জানান, ‘একজন সুস্থ মানুষের শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ৯৫-১০০ শতাংশ। এইমাত্রা ৯৩ শতাংশের কম হলে সতর্ক হতে হয় এবং ৯২ এর কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেন দেওয়া হয়। যাদের অক্সিজেন লেভেল ৯০-৯১ এ নেমে এসেছিল, এরকম কয়েকজনকে তার প্ল্যান্টে উৎপাদিত অক্সিজেন দিয়ে লেভেল ৯৮-৯৯ এ ওঠানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে তারিফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব টেস্টেও সফলতা আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।’
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ সহকারী অধ্যাপক মো. ফারুক আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘তারিফের প্ল্যান্টের গ্যাসের শতকরা বিশুদ্ধতা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা জরুরি। পরীক্ষার ফলাফলের পরে বলা যাবে এটি রোগীর জন্য ব্যবহার উপযোগী কিনা।’