নিজস্ব ডেস্ক :
অসীম বিকাশ বড়ুয়া, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং বিমান চলাচল স্থগিত করে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরিয়া গমনেচ্ছুদের ঢাকার দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করতে পারছেন।
বাংলাদেশ সরকার, সিউল বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বোয়েসেলের নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ দক্ষিণ কোরিয়া সরকার সম্প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সত্যতা নিশ্চিত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস এক কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অবহিত করে।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব ও দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম বিষয়টি নিয়ে কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুনের সঙ্গে বারবার বৈঠক করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সমাধান করার তাগিদ দেন।
নিষেধাজ্ঞা চলমান সময়ে একদিকে কোরিয়া গমনেচ্ছু বিপুলসংখ্যক উদ্বিগ্ন বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী ও ইপিএস কর্মীদের সঙ্গে এবং অন্যদিকে ঢাকার কোরিয়ান দূতাবাস ও সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর কোরিয়া প্রবেশের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুখবরটি এলো।
অপর একটি ভিডিও বার্তায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুন বলেন, কোভিড নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার সফলতা অর্জন করেছে। সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্টদূত আবিদা ইসলামের বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ ও কর্মকাণ্ডের তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এ প্রসঙ্গে কোরিয়াতে ইপিএস কর্মীদের জন্য কোরিয়ান ফেডারেশন অব মিডিয়ম অ্যান্ড স্মল বিজনেস অর্গানাইজেশনের সুযোগ্য বাংলাদেশি প্রশিক্ষক শেখ মুরাদ হোসেন বলেন, যারা ভিসা পেয়ে কোরিয়ায় আসবেন তারা নিজেদের তথা জাতীয় স্বার্থে নিজেরা বিশেষভাবে সাবধানে থেকে নিজেদের করোনামুক্ত অবস্থায় ফ্লাই করবেন।
জানা গেছে, সমস্যা থাকার কারণে বাংলাদেশের তিনটি হাসপাতাল ও ল্যাবের করোনা সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। এগুলো হচ্ছে- কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ।
জানা যায়, করোনা পজিটিভ নিয়ে কোরিয়া প্রবেশ বন্ধ করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ইনডিপেনডেন্ড আইনজীবী লি ইয়ং হোসহ দশজন সংসদ সদস্য সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইনের একটি সংশোধনী বিল পাস করেছেন, যা কোরিয়ায় করোনা মুক্তির জাল সনদ দখলকারীদের অথবা কোরিয়াতে প্রবেশের পর পজিটিভ পাওয়া গেলে ডিপোর্ট আইনের মাধ্যমে কোরিয়া ত্যাগে বাধ্য করা হবে এবং জরিমানাও দিতে হতে পারে।
সিউল বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত ৫৫৬ জন আটকেপড়া ইপিএস কর্মীকে দক্ষিণ কোরিয়া ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। দেশে গিয়ে আটকে পড়েন ইপিএস কর্মীসহ প্রায় দুই হাজার দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি।
সিউল দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব মিসপে সরেন বলেন, এতদসংক্রান্ত পরবর্তী যে কোনো সংবাদ আমরা দূতাবাসের পেজে আপডেট করব। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় আগত বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেলে আবারও নতুন করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়