সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ
🕒 জাতীয় ☰ বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
✒️মো: রফিকুল ইসলাম | নিউজ ডেস্ক- তালাশটিভি টোয়েন্টিফোর | বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ কার্যক্রম চালু করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। একইসঙ্গে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেকারত্বের প্রেক্ষাপটে প্রহসনমূলক আবেদন ফি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন এই সমন্বয়ক। বুধবার সকাল ৬টা ৪২ মিনিটে নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি।
এতে হাসনাত লিখেন, ‘আমি যেকোনো সময় আত্মহত্যা করতে পারি। ঠিক যতগুলো কারণে আমার বন্ধু মনজু গতকাল এসএম হলে আত্মহত্যা করেছে, আত্মহত্যা করার জন্য আমার কাছেও ঠিক ততোগুলো কারণ রয়েছে। উদ্যম তারুণ্য-পেরোনো প্রান্তিক বয়সে এসে, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নির্জনতায় বসে মাঝে-মাঝে আমি ভাবি, আমি এখন পরিচয়হীন,পরিচর্যাহীন-বেকার। আমি না ছাত্র, না পেশাজীবী। না কারও দায়িত্ব নেওয়ার যোগ্যতা আমার এখন হয়েছে, না আমার দায়িত্ব নিতে সমাজের আর আগ্রহ রয়েছে। অর্থাভাবে ভীষণভাবে জর্জরিত। আত্মবিশ্বাস ভয়াবহ তলানিতে। মানসিকভাবেও ভীষণ বিপর্যস্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাটছাঁট করে এই দুর্মূল্যের বাজারে সত্তর টাকায় সারাদিন পার করতে হয়। ‘কড়া’ হয়েছে বলে ক্যান্টিন বয় যখন গরু দিতে চায়, টাকা বাঁচাতে হাসি দিয়ে ডায়েটে থাকার অজুহাতে সবজি নিয়ে আসতে বলতে হয়। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে মাঝে-মাঝে মাছ কিংবা মাংসের একটু ঝোলের জন্য ক্যান্টিন বয়কে বলতে গিয়েও থেমে যাই। ডিম-আলু-ডাল জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। বর্তমান বাজারদরে এগুলোও এখন সাধ্যের বাইরে। খাবার খরচ, চাকরির অ্যাপ্লিকেশন ফি, পকেট খরচ, প্রিলি-রিটেনের বইয়ের দাম নিয়ে ভাবতে ভাবতে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। রাত গভীর হয়, কাঁটাবন মসজিদের ফজরের আজান কানে আসে, মাস বাড়তে থাকে; এদিকে পাল্লা দিয়ে মুখে রুচি আর পেটে ক্ষুধা দুইটাই বাড়তে থাকে। শুনেছি অভাবে নাকি মানুষের ক্ষুধাও বাড়ে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ স্ট্যাটাসের একাংশে লিখেছেন, ‘আত্মহত্যা করতে জীবন আমাকে হয়তো শতশত যৌক্তিক কারণ দেখাচ্ছে; কিন্তু আমি জীবনকে শুধু একটা কারণ দেখিয়েই বেঁচে থাকব। আর সেটা হলো ‘আশা’। থেমে না গিয়ে এই সম্বলটুকু নিয়েই এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘Every man dies but not everyman lives’। মৃত্যুকে দেখিয়ে দেব আমি জীবন থেকে পালিয়ে যাইনি, যারা বেঁচেছে, আমি তাদের একজন।’
‘অজানা এক লুপ্ত নক্ষত্রের মতো হারিয়ে যাওয়ার আগে, ভবিষ্যতের অপ্রত্যাশিত সব বিস্ময়ের মুখোমুখি হতে আমাদের স্বপ্ন ও আত্মবিশ্বাসে আমাদের সুস্থির থাকতে হবে। দীর্ঘ খরা কাটিয়েও আবার যেমন প্রকৃতিতে বৃষ্টি নামে, শুকিয়ে যাওয়া নদীতেও আবার যেমন ঢেউ উঠে, আমরাও জানি, কষ্ট পেতে পেতে কোনো একদিন আবার আমরা সূর্যের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে সুস্মিত শিশিরের মতো সবার মাঝে আবারও প্রকাশিত হব, সতেজে। তাই, সমাজের কাছে অনুরোধ, অপেক্ষা করুন। আমাদের সময় দিন। আমরা যা, আমাদের সেভাবেই মেনে নিন। ‘কে কী হয়েছে’ এসব উদাহরণ টেনে এনে, ‘আমাদের কী হতে হবে’ এসব বলা বন্ধ করুন। পাশাপাশি আর কোনো হাসনাত যেন তেলহীন প্রদীপের মতো ধীরে ধীরে নিভে গিয়ে মনজু না হতে হয়, সেজন্য দেখা হলেই ‘এখন কি কর’ প্রশ্নটা না করে, ‘এখন কেমন আছো’, এ প্রশ্নটা করুন। কারণ রাষ্ট্রের এই অসম ও অপ্রতুল আয়োজনে আমরা ভালো নেই।’
এছাড়া পোস্টে বিশেষ অংশ হিসেবে যুক্ত করে তিনি জানিয়েছেন, উপরোক্ত পোস্টটি গত বছরের ২৩ আগস্ট লিখেছিলেন তিনি। যেখানে চাকরিপ্রার্থীদের কষ্ট ও হতাশা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যা কেবল একজন চাকরিপ্রার্থী ছাড়া অন্য কেউ কখনো বুঝবে না যে, এই যন্ত্রণার মাত্রা কতটা সহনীয়।
সবশেষ সরকারের কাছে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদন ফি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানাই, পিএসসির সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ কার্যক্রম চালু করুন। এছাড়া বেকারত্বের প্রেক্ষাপটে প্রহসনমূলক আবেদন ফি বাতিল করুন।
🪐বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24🪐