🕒 ইসলাম ☰ মঙ্গলবার ৩০ আগস্ট ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
✒️ মোঃ হারুনুর রশিদ চৌধুরী | দেশ ও জাতির আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রতিক হলো ছাত্র সমাজ। একজন ছাত্র মানে শিক্ষক, পিতা-মাতা ও প্রতিবেশী সবার নয়ন তারা। ছাত্র মানে দেশের আগামীর কর্ণধার। তার উপর ডিপেন্ড করে জাতির নিরাপত্তা, শান্তি শৃঙ্খলা এবং দেশ উন্নতির অগ্রযাত্রা। রাষ্ট্রপতি, সমাজপতি রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, কবি, লেখক ও পন্ডিত এদের একদিন সমাপ্তি ঘটবে। আর তাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হবে আজকের ছাত্রদের। তারা সময়ে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি লাভ করবে। তাই ছাত্রদের এখন থেকে সব সময় ঐক্যবদ্ধতা, সংঘবদ্ধতা ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ আচরণ শেখা জানা সময়ের দাবি। ছাত্রদের হিংসা, লেশ, লোভ, ঘৃণা, বৈষম্য, সন্ত্রাসী, লুটতরাজ এ জাতীয় প্রবৃত্তিহীন বেড়ে ওঠা চাই।
কথিত আছে- ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে। যে শিক্ষা আমরা গলাদকরন করছি আচার-আচরণে প্রেকটিকাললি তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটানো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যা অর্জনের পাশাপাশি জীবনের প্রতিটি সময়ে স্তরে তা প্রয়োগে ব্যার্থ হলে জাতি সজ্ঞানের ছোঁয়া পাবে না। শুধু শিক্ষা অর্জনে ক্ষান্ত নয়; সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। বলা আছে, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। আমরা যদি শিক্ষার পাশাপাশি সুশিক্ষিত অর্থাৎ সজ্ঞানি হতে না পারি তাহলে জোরপূর্বক বিদ্যা গিলানো ছাড়া কিছু হবে না। ওস্তাদ, সহপাঠী, প্রতিবেশী, পিতা-মাতাসহ সকলের সাথে শ্রদ্ধা, স্নেহ, প্রেম ও সৌজন্য মূলক আচরণই শিক্ষার মূল লক্ষ্য।
অন্যথায় শিক্ষার পূর্বে যে মুর্খতা দুর্জনিতা, তাই বদ্ধমূল থেকে যাবে। আর তাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ তো হবেই না বরং তার দোষ-চরিত্রের কারণে লোকেরা পীড়িত হবে যত্রতত্র। প্রবাদ আছে- দুর্জন বিদ্যান হলেও পরিত্যাজ্য। বিষধর সাপের মাথায় দামী মণি থাকলেও তার কাছে মণির জন্য যাওয়া যেমন বোকামি, ঠিক তেমনি দুষ্ট প্রকৃতির শিক্ষিত লোকের কাছে সহযোগিতা আশা করাও বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুতরাং হতে হবে অর্জিত শিক্ষা দ্বারা বিনয়ী, কোমল, মিশ্র, ভদ্র, শিষ্টাচার পূর্ণ। ফেলে দিতে হবে হিংসা, ক্রুদ, একগুয়েমি; ভুলে যেতে হবে অহংকার, আত্মম্ভরিতা ও রুঢ় আচরণ। থাকতে হবে সকলের সঙ্গে মিলে মিশে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা যে যেখানের ছাত্র হয়না কেন সবার আগে চিন্তা করতে হবে আমরা মুসলিম, ধর্ম ইসলাম আর ইসলাম অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা। ব্যাক্তি বিশেষ প্রয়োজনীয়তা বা কর্মপন্থায় ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু, মত-পথ ভিন্ন হলেও জেনে রেখো গন্তব্য অভিন্ন। ক্ষুদ্রতম বিষয়ে ঝগড়া ঝাটি না করে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আল্লাহর রুজ্জুকে আঁকড়ে ধরতে হবে।
সংঘবদ্ধভাবে থাকার অনেক গুলো উপকার রয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- স্বাধীন সার্বভৌম ও উন্নত দেশগুলোর পেছনে ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। ছাত্ররা পারে না এমন কাজ খুব কমই আছে; এক ফরাসি শাস্ত্রী লিখেছেন, এক জামানায় বিদ্যালয় থেকে যারা পালাতো তারাই ফ্রান্সকে রক্ষা করেছে। সে যুগের শিক্ষা কার্যক্রম কেমন ছিল আমার জানা নেই, যাই হোক তারা ছাত্র। আমাদের এই দেশও স্বাধীন হয়েছে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতের মতো ছাত্রদের আত্ম ত্যাগের মাধ্যমে। এরকম অসংখ্য নজির আছে ছাত্রদের অবদান নিয়ে। আর সবগুলো হলো তাদের ঐক্যবদ্ধতার সুকর্ম ফল।
ছাত্ররাই কেবল কঠিন থেকে কঠিন কাজের আঞ্জাম দিতে পারে একতার শক্তি নিয়ে। ছাত্ররা চাইলে এ্যাভারেস্ট জয় করা সম্ভব। কারণ তারা ঐক্য নামক শক্তিতে বলিয়ান। সব সময় সবখানে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে Unity অতীব প্রয়োজন। Unity is a power. অর্থাৎ, একতাই শক্তি। মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ নাই বলে আজ মুসলিম বিশ্ব শকুনের থাবার শিকার। মহাবিশ্বের এই দুঃসময়ে দল মত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে জমিয়ে থাকা সময়ের প্রেক্ষাপট।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর রহমতের হাত সংঘবদ্ধের উপর। লক্ষ্যনীয় জঙ্গলে বড় মেষের পাল হিংস্র জন্তুর থাবা থেকে বেচে যায়। ছোট মুরগির বাচ্চা যখন মা নামক অভিভাবকের সাথে থাকে; চিল শকুনের থাবা থেকেও রক্ষা পেয়ে যায় ছোট মুরগির বাচ্চা। ইসলাম শরিয়তে ঐক্যের বড় দখল রয়েছে।
আর হাদিস শরীফে এসেছে; হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমাদেরকে হযরত ওমর (রাঃ) জাবিয়া নামক স্থানে ভাষন দিচ্ছিলেন, তিনি বলেছেন- হে মানব সকল! আমি তোমাদের মাঝে দাঁড়িয়েছি, যে রকম রাসুল (সাঃ) আমাদের মাঝে দাড়াতেন; অতঃপর তিনি (নবী সাঃ) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে আমার সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করার অসিয়ত করতেছি, অতঃপর যারা আসবে (অর্থাৎ তাবেয়ী) অতঃপর যারা আসবে (অর্থাৎ তবে তাবেয়ী) এরপর মিথ্যা ব্যাপক হয়ে যাবে; এমনকি মানুষ শপথ করবে, অথচ তাকে শপথ করতে বলা হয় নাই। সাক্ষী দিবে, অথচ তাকে সাক্ষী দিতে বলা হয় নাই।
সাবধান! কোনো ব্যাক্তি যখন কোনো মহিলা নিয়ে নির্জনে থাকে তখন তাদের সাথে তৃতীয় জন থাকে শয়তান। তোমরা একাকিত্ব ছেড়ে জামাতকে আঁকড়ে ধর। কেননা শয়তান একার সাথে থাকে এবং দু’জন থেকে অনেক দুরে সরে যায়। যে ব্যাক্তি জান্নাতে যাওয়া আশা করে সে যেন তাবলীগ জামাতের সাথে জড়িয়ে থাকে। যার মন নেক আমলের কারণে আনন্দিত হয় এবং মন্দ কাজে ব্যথিত হয় সে প্রকৃত মোমেন। সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় ইসলামে একতার বড় দখল রয়েছে ।
এ বিষয়ে ১০ম শ্রেণির ইংরেজি বয়ে একটা গল্প আছে, তা হলো, এক যুবকের মানুষের ভীড় ভালো লাগছে না বিদায় একাকিত্ব গ্রহণ করতে চাই, তাই সে সমাজিক জীবন ছেড়ে জঙ্গলে চলে গিয়ে ওখানে একটি কুঁড়ে ঘর বানিয়ে আরামে কয়েকদিন কাটানোর পর ইদুর তার কম্বল কেটে দিচ্ছে সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই সে ইদুর তাড়াতে নিয়ে এলো এক বিড়াল। এখন বিড়ালের দুধ দরকার, দুধের জন্য নিয়ে আসলো গাভী, গাভী চরানোর জন্য প্রয়োজন রাখাল। রাখালের খাবার-দাবারের জন্য তাকে বিয়ে করালো।
🪐বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24🪐
বিয়ের পর সন্তান সন্তুতি দিয়ে আবার ঘর ভর্তি হয়ে গেল। এখন যুবক বলে, আমি নিজেকে আবারও পরিবারের মাঝে খুঁজে পেলাম, Man Can’t live alone. মানুষ কখনো একা বাঁচতে পারে না। সুতরাং একা বাঁচতে চাইলে ও যেহেতু পারা যায় না তাই সংঘবদ্ধতা শেখা অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ সমাজ এ জাতি সোনালী দিনের আচার ঐতিহ্য বেমালুম হারিয়ে অস্থির দিনাতিপাত করছে আর আজকের দিনের ছাত্রসমাজের প্রতি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে দূষিত সমাজের অবসান ঘটিয়ে পরিশুদ্ধ সমাজ সৃজিবে। ত্রাসের রাজত্ব থাকবে না যেখানে।
আজকের তরুণ যুবক ছাত্র সমাজের নিরবে ঘুমালে হবে না, রুখে দাড়াতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে মাজলুম জনতার সাহায্যে, হতে হবে প্রত্যুপকার। তবেই হয়তো আর জননীর বুক খালি হবে না, বিধবা হবে না শত স্ত্রী। এতিম হবে না হাজারো অবুঝ শিশু। কাজেই কেবলই বিদ্যা-দেবী হয়ে নিজ ক্যারিয়ার গঠন নয় তাঁবু গড়তে হবে হিংস্রতার বিরুদ্ধে। সমাজ রাস্ট্র পরিচর্যার মিশন ও ধারণ করতে হবে আজকের ছাত্র সমাজের।
✒️লেখক: মাওলানা ইউনুস আহমেদ
ফাজেল: জামিয়া জিরি মাদরাসা, চট্টগ্রাম।