ইসলাম ☰ বৃহস্পতিবার ২০ এপ্রিল ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
তালাশ নিউজ ডেস্ক | ‘ঈদ’ আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে খুশি, আনন্দ, উৎসব। মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তায়ালা বাৎসরিক দু’টি উৎসব রেখেছে। একটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর তথা রমজানের ঈদ, মুসলিম সম্প্রদায় সুদীর্ঘ ১টি মাস সিয়াম সাধনার পরে রবের পক্ষ থেকে তাদের জন্য একটি ঈদ দান করেছেন উৎসব পালন করার জন্যে। অন্যটি হচ্ছে ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদ, চন্দ্র মাস অনুযায়ী জিলহজ্জ মাসের দশ এগারো এবং বারো তারিখে মুমিনরা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জন্তু জবাই করার মাধ্যমে উৎসব পালন করবে।
একটি বছর ঘুরে যে ঈদুল ফিতর আসে তার অনেক তাৎপর্য রয়েছে। ‘ঈদ’ ধনী গরিব, মিসকিন, দুস্ত সকল মানুষের জন্য। ইহাকে ঈদুল ফিতর বলা হয় এজন্য যে, রোজাদার রোজা অবস্থায় তার ভুল ভ্রান্তি ও গর্হিত কাজের কাফ্ফারা এবং গরিব মিসকিনদের আহার হিসেবে নির্ধারিত ফিতরা আদায় করবে। ইসলাম কতই সুন্দর!
ধনীরা নতুন জামা কাপড় দিয়ে উৎসব পালন করবে পাশাপাশি গরিব মিসকিনরাও যাতে বাদ না পড়ে এজন্যে এই ফিতরার ব্যবস্থা।’ঈদ’ আসে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন গড়ার জন্যে। সারা বছরের হানাহানি যুদ্ধ-বিগ্রহ ভুলে গিয়ে ঈদের সালাতে সবাই এক কাতারে সমবেত হবে। হৃদয়ের আবর্জনা দুর করবে পরষ্পর আলিঙ্গনের মধ্যদিয়ে। ফুটিবে হাসি সবার ঠোঁটে মুখে, কোশল বিনিময়ের ধুম পড়বে সারা গায়ে। আত্মীয়তা বন্ধন সুদৃঢ় করতে ঈদ, দোস্ত দুশমন ভুলে খুশি বিলাতে সকলের তরে এসেছে এই ‘ঈদ’।
যাঁরা আত্মীয়তা চিহ্ন করেছে তাদের উচিত ‘ঈদ’ উপলক্ষে হলেও আত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা; কেননা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যাক্তি চাই তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন আত্নীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখে।”
কাজেই শুধু আনন্দ উদযাপন করলে হবে না, আত্নীয়ের সাথে সুসম্পর্ক ও বজায় রাখতে হবে। যে আপনার সাথে সুসম্পর্ক অটুট রেখেছে তার সাথে যেমন সম্পর্ক থাকবে; যে চিহ্ন করছে তার সাথেও সুসম্পর্ক অটুট রাখতে হবে।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24
নবী করিম (সাঃ) বলেন, “ওই ব্যক্তি আত্মীয়তা রক্ষাকারী নয়, যে ইহসানের পরিবর্তে ইহসান করে। প্রকৃত আত্নীয়তা রক্ষাকানী হলো সেই ব্যক্তি, যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা সত্বেও সে আত্মীয়তার বন্ধন ধরে রেখেছে।”
উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায়, কারও আত্নীয় যদি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার বিনিময়ে সেও সম্পর্ক রাখে, তাহলে এর নাম সেলায়ে রেহমি’ তথা আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা নয়; বরং কেউ আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পরেও তার সাথে সুসম্পর্ক অটুট রাখার নাম-ই হলো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।
একইভাবে আমাদের চারপাশে থাকা এতিম, অনাথ বিধবা মানুষগুলোর খোঁজ খবর রাখা অত্যন্ত গুরুত্বের। বাৎসরিক দিনগুলোতে তাদের কথা চিন্তা করতে হবে। উৎসবের দিনে স্বখুশির সঙ্গে জড়াতে হবে তাদের খুশিকে। তারা গরিব হতে পারে, এতিম অনাথ হতে পারে কিন্তু আমার মতো তারাও মানুষ। তবে যে প্রত্যুপকারে আনন্দিত হতে পারে সেই তো আসল মানুষ।
নবীজি সাঃ বলেন, “আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব; একথা বলার সময় তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল মিলিয়ে উভয়ের মাঝে একটু ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন।”
তিনি আরও বলেন, “বিধবা মিসকিনের প্রতি অনুগ্রহকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর সমতুল্য।”
কবি বলেছেন- সবার সুখে হাসব আমি কাঁদব সবার দুঃখে; নিজের খাবার বিলিয়ে দেবো অনাহারীর মুখে।
কাজেই জাত-বিজাত, ব্যক্তি দন্ধ ভুলে সবাই ভাগাভাগি করে নিই ঈদের খুশিকে। মনে রাখতে হবে কেউ যেন না কাঁদে মোর আচরণে, ছোট ছোট আবদার পূরনে, কথা রাখার গল্পে আমরাই হয় শ্রেষ্ঠ। আপন প্রয়োজনাতীত বস্তু দুস্ত মানুষের হাতে তুলে দিয়ে প্রত্যেকে হয় পরের তরে।
|লেখক- মাওলানা মোঃ ইউনুস আহমেদ
ফাজেল জামিয়া জিরি মাদ্রাসা চট্টগ্রাম