চট্টগ্রাম ☰ বুধবার ২২ মার্চ ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
মোঃ হারুনুর রশিদ চৌধুরী-স্টাফ রিপোর্টার | সুদীর্ঘ এগারোটা মাস পরে মহান রবের পক্ষ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের দুয়ারে উঁকি দেয় রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের এই মাস রমজান। পাপের ভার বিমোচন করে পুণ্যময় কল্যাণ আর প্রতিপালকের নৈকট্য লাভ করতে সিয়াম সাধনা তুলনা অপরিসীম। প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে সকল মুসলমান নর-নারীর উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। চিন্তক বিষয় হচ্ছে অদ্যাবধি সকল জাতি গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে রোজা নামক উপোস সাধনা করে থাকে।
মুসলমানরা রোজা রাখলে তাকে বলা হয় ‘সিয়াম’, খ্রিস্টানরা রোজা রাখলে তাকে বলে ‘ফাস্টিং’, হিন্দু কিংবা বৌদ্ধরা রোজা রাখলে বলে ‘উপবাস’, বিপ্লবীরা রোজা রাখলে বলা হয় ‘অনশন’। আর মেডিক্যাল সাইন্সে রোজা রাখাকে বলা হয় ‘অটোফেজি’। দেখা যায়, সিয়াম পালনের পিছনে মহান আল্লাহ তা’য়ালার পরকালীন অফারসমূহ যেমন অনন্য, তদ্রূপ রোজার ফলে ইহকালিন কল্যাণও অতুলনীয়।
আল্লামা মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরি (রাহ.) রোজার ছয়টি উপকারিতার কথা বলেছেন। যেমন- ১. রোজা অতি বড় সওয়াবের কাজ। তা ফেরেশতা প্রবৃত্তিকে শক্তিশালী করে এবং পশু প্রবৃত্তিকে চরম দুর্বল করে। আর রুহের প্রাণকে আলোকিত করে তুলতে ও রিপুকে পরাজিত করার লক্ষ্যে রোজার চেয়ে উত্তম কোনো দাওয়াই নেই।
২. রোজা দ্বারা যেভাবে রিপুর দমন ঘটে, তেমনি তার দ্বারা পাপ মাফ হয়। পবিত্র হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
৩. রোজার দ্বারা মানুষ ও ফেরেস্তার মাঝে বৈশিষ্ট্যগত গভীর সামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়। যখন ফেরেশতারা তাদের সামঞ্জস্য রূপ-বৈশিষ্ট্য কারো মাঝে দেখতে পায়, তখন তারা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। হাদিসে পাকে উল্লেখ আছে যে, রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহ তা’য়ালার নিকট মেশক আম্বরের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। তাই আল্লাহ যাকে ভালবাসেন ফেরেশতারাও তাকে ভালোবাসেন।
৪. পুণ্যত্ব অর্জন করার ক্ষেত্রে সামাজিক প্রথা প্রচলন বড় ধরনের প্রতিবন্ধক; কিন্তু যখন রোজা যথা নিয়মে গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয় এবং তা নিয়ম হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষ বহু বিদ প্রথা থেকে বেঁচে যায়। এ বিষয়ে পবিত্র হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, যখন তোমাদের কেউ সওম পালন করবে সে বেহুদা ও অশ্লীল কথা বলবে না এবং চিৎকার চেঁচা-মেচি করবে না। যদি অপর কেউ তাকে গাল-মন্দ করে ও তার সাথে ঝগড়া করতে উদ্যোগী হয়, তখন বলে দিবে আমি রোজাদার।
৫. যখন গোষ্ঠীগতভাবে সমাজের লোকেরা রোজা পালন করে তখন তাদের মধ্যের অবাধ্যজনকে শিকলে বেঁধে ফেলা হয়। উপরন্তু জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং দোযখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং ৬. রোজাদার মহান আল্লাহর মিলন ও দর্শন লাভের সৌভাগ্য উপার্জন করে। এ ব্যাপারে হাদিসে কুদসীতে বলা হয়েছে যে, রোজা আমার জন্য এবং স্বয়ং আমিই এর বিনিময় দিবো।
উপরোক্ত সওমের উপকারিতা গুলো হলো মানষিক ও ধার্মিক। রোজার ফলে বিশেষজ্ঞরা শারীরিক উপকারের কথা বেশ উন্মোচন করেছেন। তেমনি জাপানের এক বিজ্ঞানী “ইশিনোরি ওশুমি” যিনি অটোফেযি নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পান ২০১৬ সালে। তিনি আবিস্কার করেন যে, ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা উপবাস থাকার ফলে মানুষের দেহে অটোফেযি চালু হয়।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24
Autophazy কি?
অটোফেজি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘অটো’ ও ‘ফাজেইন’ থেকে। বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে- আত্ম ভক্ষণ বা নিজেকে খেয়ে ফেলা। বিষয়টি শুনতে ভয়ানক হলেও এটা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কেননা এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহকে পরিষ্কার করার একটা প্রক্রিয়া, যা সম্পন্ন হয় কোষীয় পর্যায়ে। শরীরের বিভিন্ন কাজ করার জন্য প্রতিনিয়ত প্রোটিন তৈরি হয় এবং প্রোটিনের কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রোটিনের গঠনটি অ্যামিনো অ্যাসিড দ্বারা ত্রিমাত্রিক হতে হয়। যদি ত্রিমাত্রিক না হয় তবে প্রোটিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক ও নানা রোগের সৃষ্টি করবে।
অটোফেজি মূলত একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। যে প্রক্রিয়ায় দেহের ক্ষয়িষ্ণু এবং অপ্রয়োজনীয় কোষাণুগুলো ধ্বংস ও পরিচ্ছন্ন হয়। আসলে এ হলো কোষের এক আবর্জনা পরিচ্ছন্নকরণ প্রক্রিয়া। কোষের কার্যক্ষমতাকে ঠিক রাখতে যে প্রক্রিয়ার কোনো বিকল্প নেই। আর দেহ যখন বিশেষ সংকটাবস্থায় থাকে, তখন এই অটোফেজিই দেহকে বাঁচিয়ে রাখে।
অন্যান্য উপকারিতা সমূহঃ-
(১) দেহের সেল পরিস্কার হয়। (২) ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়। (৩) পাকস্থলীর প্রদাহ সেরে যায়। (৪) ডায়াবেটিস ভাল হয় (৫) বার্ধক্য রোধ করা যায় (৬) স্থুলতা দূর হয় (৭) দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায় ইত্যাদি।
অতএব পরিশেষে, জুর গলায় এ কথা বলা যায় যে, পরকালীন কল্যাণের পাশাপাশি ইহকালে শারীরিক ও মানসিক বহুবিধ উপকারিতার এই সিয়াম সাধনা হেলায় বিনষ্ট করার নয়।
||| লেখক- মোঃ ইউনুস আহমেদ
ফাজেল জামিয়া জিরি মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।