মোঃ ইউনুস আহমেদ
জাতীয় | বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
মোঃ হারুনুর রশিদ চৌধুরী | প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে ইংরেজি বলতে শুধু ইংরেজ ব্যক্তি নয়, সমগ্র ইংরেজ প্লাটফর্ম। যেমন মনে করেন ইংরেজি শব্দ যা আমার বাংলা ভাষার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্যমান, স্বাধীন বাংলার মানুষ গুলো আজ কথায় কথায় ইংরেজি ছাড়া বলতেই চাই না। ইংরেজি বলাটাই যেন ভদ্রতা শালিনতা ও ঐতিহ্য। তারপর ইংরেজি সংস্কৃতি, কালচার, বেহায়াপনাসহ অশালীন অনৈতিক সব আচার-আচরণ বাংলার জনগোষ্ঠীর মাঝে বিদ্যমান। আজ ভুলে বসছে তারা যে ইংরেজের মতো তাদেরও একটা নির্দিষ্ট কালচার আছে; সংস্কৃতির ঐতিহ্য ইতিহাস আছে। বাঙালি পোষাকের আলাদা সম্মান আছে। বিশ্বে এমন নজির নেই যে বাঙালির মতো শুধু ভাষার জন্য প্রাণ বিলিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন রাজনৈতিক অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তেমনি ভাষা, সাহিত্যেও অবদান কম না। তিনি দেশের জন্য জাতির জন্য যেমন আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন, তেমনি ভাষার জন্যও। তিনি জেলে থাকা অবস্থায় রাষ্ট্র ভাষা উর্দু'র ঘোষণা হলে তিনি অনশন ধর্মঘট করে। ফলে তাকে ঢাকা থেকে পিরোজপুর মেডিকেলে রিটার্ন করা হয়। পরে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে জাতি আন্দোলনে ফুঁসে ওঠে। বাঙালি জাতি ভুলতে বসেছে সেই ১৯৫২ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস। ভুলতে বসেছে নিজেদের কালচার, সংস্কৃতি সভ্যতা, গল্প উপন্যাস ছড়া, গান ও কবিতা। এমনকি খেলাধুলা পর্যন্তও।
পূর্বে দাদি-নানিরা যে ঘুম-পাড়ানির মিষ্টি গল্প শুনাতো। আধুনিক শিক্ষার কর্মনাশার স্রোতে সেগুলো বিস্মৃতির অতল গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। এখনকার জননী সন্তানকে আর রাখলের কথা রাক্ষসপুরির ঘুমন্ত রাজকন্যার কথা শুনাই না। তারা বলেন Shakespeare এর গল্পের অনুবাদ। তারপর ধরুন ছড়ার কথা। ছেলে মেয়েরা রোদের সময় বৃষ্টি হচ্ছে অমনি সময় সমস্বরে ঝংকার দিয়া ওঠে। "রোদ হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে-খেঁকশিয়ালীর বিয়ে হচ্ছে।" শুধু ছড়া কেন? খেলাধুলার না কত বাঁধা গৎ ছিল এ দেশে। যখন ফুটবল ও ব্যাট বলের নাম কারও জানা ছিল না তখন কাবাড়ি খেলার খুব ধুম ছিল। বিদেশি খেলার প্রচলনের সঙ্গে সঙ্গে এসব লোপ পাবার উপক্রম হয়েছে।
এরকম নানান রকমের ইংরেজ কিংবা বিদেশি সংস্কৃতি এসে গ্রাস করে ফেলেছে বাঙ্গালীর শত বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন তো আর ২১শে ফেব্রুয়ারীর জন্য ছিল না। স্বাধীনতা দিবস নয় কভু মার্চের জন্য। ডিসেম্বরও নয়। লুঙ্গির পরিবর্তে প্যান্ট, আবৃত শাড়ির পরিবর্তে বিজাতীয় লেংটা পোশাক, স্বদেশের উৎসব পালনে বিদেশি তারিখ, পশ্চিমা সংস্কৃতি সৌকর্য প্রভৃতি কখনো জাতির কপালে সুফল বয়ে আনতে পারে না।
কাজেই দিবস, উৎসব পালনের প্রতিটি খাতে আমাদের শত বছরের গৌরবের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সাপোর্টের শীর্ষ স্থানে রাখতে হবে। চিন্তার দুয়ারে করাঘাত করতে হবে বাঙালি শৌর্যবীর্য। পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে তাদের; যারা বাংলার পথে হেটে ছিলেন, বাংলাকে ভালবেসে ছিলেন। বাংলার মাটি ও মানুষের জন্য এবং বাংলা ভাষার তরে সুখময় জীবনের ইতি টেনে ছিলেন। তবেই একাত্তর আর বায়ান্নর সকল যাতনা সার্থক হবে। আর বিশ্বের মানচিত্রে গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। বিধাতার কাছে সকল শহীদের মাগফিরাত কামনা করছি।
লেখক | মোঃ ইউনুস আহমেদ
ফাজেল জামিয়া জিরি চট্টগ্রাম
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন
স্বত্ব © ২০২৪ তালাশটিভি২৪ www.talashtv24.com