২১/১২/২০২৪ ইং
Home / X-Clusive / ঘরের খাবার অনলাইনে বিক্রি করে স্বাবলম্বী সায়মা

ঘরের খাবার অনলাইনে বিক্রি করে স্বাবলম্বী সায়মা

মাদারীপুর | শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

নিউজ ডেস্ক | ঘরের খাবার অনলাইনে বিক্রি করে স্বাবলম্বী নুসরাত জাহান সায়মা। সায়মার বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার ৯নং ব্রিজ এলাকায়। বাবা মোঃ নুরুল হক হাওলাদার চরমুগরিয়া গার্লস স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। মা তাসলিমা খানম। পরিবারের ইচ্ছা ছিল মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে চাকরি করবে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে সায়মার স্বপ্ন ছিল স্বাবলম্বী হবে। স্বপ্ন দেখেন নিজে কিছু করার। নিজে কাজ করে আয় করবেন। কিন্তু কী করবেন, কোথা থেকে শুরু করবেন, কিছুই বুঝতে পারেন না।

পরে অনেকটা খেয়ালবশেই আচার বানানো শুরু করেন। বর্তমানে সংসারের কাজ, পাশাপাশি চাকরি, সন্তান লালন-পালন করে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের জন্য মজাদার খাবার বানাতে পারেন না। বাজার থেকে কিনে আনা খাবারগুলো অনেক সময় স্বাস্থসম্মত হয় না। তাই তিনি চিন্তা করেন, ঘরে বসে স্বাস্থসম্মত ও মজাদার খাবার তৈরি করে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করবেন। তাই ২০২০ বছরের ১৩ই আগস্ট শুরু করেন ওয়েবসাইট ভিত্তিক ব্যবসা। ফেসবুকে শুরু করেন প্রচারের কাজ। অনলাইন ব্যবসার নাম দেন ‘ইচ্ছেঘুড়ি’।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথমদিকে শুধু নানা ধরনের আচার বিক্রি হতো অনলাইনের মাধ্যমে। করোনা মহামারির সময় ঘরে বসেই ব্যবসা শুরু করেন সায়মা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও মোটামুটি ভালোই চলছিল ব্যবসা। দুই মাসে আচার বিক্রি ভালো হলেও কিছু সমস্যার কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়।

তিন মাস পর নতুন উদ্যোগে নতুন চিন্তা আর কৌশলে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ব্যবসা শুরু করেন। এবার শুধু আচার নয়, নানা ধরনের হাতে তৈরি খাবার বিক্রি শুরু করেন। এর মধ্যে বাটার, মোজেরালা চিজ, বেসন, ট্যাং, নারিকেল তেল, ঘি, খেজুর, চা, চিপস, শাহি হালিম মিক্স, ঝালমুড়ি মশলা, পেঁয়াজু, ফুচকা, কাসুন্দি, নুডলস, পাস্তা, খিচুড়ি মিক্স, মধু, খেজুরের গুড়সহ নানা ধরনের আইটেম আছে। শীতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে খেজুরের গুড়। গ্রাম থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় বানিয়ে বিক্রি করেছেন।

নুসরাত জাহান সায়মা বলেন, ‘ব্যবসাটা শুরু করি মাত্র ৩৩০ টাকা দিয়ে। অথচ গত দুই বছরে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করেছি। এত ভালো বিক্রি হবে কখনও ভাবিনি। এ পর্যন্ত রিপিট কাস্টমার পেয়েছি হাজারের বেশি। তবে বিজনেসটা শুরু করেছিলাম একটা স্বপ্ন থেকে শখের বশেই। প্রথম যেদিন নিজহাতে বানানো প্রোডাক্ট কাস্টমারের হাতে পৌঁছে দিই, সেই অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ। কাস্টমারের কাছ থেকে পাওয়া ফিডব্যাক ছিল কাজের প্রতি অনেক বড় অনুপ্রেরণা।’

তিনি বলেন, ‘নিজহাতে রান্না করে প্রথম উপার্জন ছিল সামান্য। সেই সামান্য উপার্জন আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। অনলাইনের মাধ্যমে এ কাজের পেছনে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট পেয়েছি বাবা-মা, স্বামী, ছোটবোন, ভাই, ছোট খালা-খালু, শ্বশুর-শাশুড়ির। প্রথমে তাদের সার্পোট না পেলেও এখন তারা সাপোর্ট করছেন। প্রতিনিয়ত খবর নিচ্ছেন। ই-কমার্সের মাধ্যমে আমার স্বপ্নপূরণ হয়েছে।’

সায়মা আরও বলেন, ‘২০২০ সালের ১১ই এপ্রিল উই গ্রুপে জয়েন করি। সবার উদ্যোগ, আগ্রহ, কাজের প্রতি বিশ্বাস দেখে নিজেও হোমমেড ফুড নিয়ে কাজ করার সাহস অর্জন করি। আমি এবং ছোটবোন মিলে ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ নামে পেইজ খুলি। প্রথম আচার, কিছু খাবার, মায়ের হাতের তৈরি গাওয়া ঘি ও শ্রীমঙ্গলের চা দিয়ে শুরু করেছিলাম উদ্যোক্তা জীবন। সবার অনেক প্রশংসা পেয়েছি। প্রায় প্রত্যেকেই রিপিট কাস্টমার হন। যা আমার কাজের বিস্তৃতির জন্য অনেক বেশি অনুপ্রেরণার।’

মাদারীপুর জেলায় ৪ রকম বালাচাও, হোমমেড বাটার, চিজ, অষ্টগ্রামের পনির ও হোমমেড মশলাগুঁড়ো নিয়ে কাজ শুরু করেন সায়মা। সবার রেসপন্স ছিল অকল্পনীয়। অন্য খাবারের সঙ্গে সবাই পরিচিত থাকলেও অপরিচিত খাবারের মধ্যে বালাচাও ছিল অন্যতম। বালাচাও হচ্ছে শুঁটকি দিয়ে তৈরি রেডি টু ইট খাবার। বালাচাও তৈরির জন্য শুঁটকি ধুয়ে শুকানো থেকে শুরু করে প্রস্তুত করার ভিডিও কাস্টমারকে অনেক বেশি আকৃষ্ট করেছে।

বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আপডেট খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24

পাশাপাশি আরও কিছু খাবার নিয়ে কাজ করছেন। যেমন- খেজুরের গুড়, চাকের মধু, নারিকেল তেল, ড্রাই ফ্রুটস, ঘানিতে ভাঙা সরিষার তেল। এসব খাবারের পাশাপাশি তৃণমূল থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যেমন- মাদারীপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়, পুরান ঢাকার বাকরখানি, খুলনার ঐতিহ্যবাহী চুইঝাল, কুমড়োর বড়ি, রাজমা, নাটরের কাচাগোল্লা নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তার পণ্য এ পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছাতে পেরেছেন।

উদ্যোক্তা সায়মার স্বামী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘নারী-পুরুষ সবারই উদ্ভাবনী শক্তি সমান বলে আমি মনে করি। তাই শুধু দরকার সেগুলো বিকশিত করার সুষ্ঠু পরিবেশ। সেই সঙ্গে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আর ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা। যাতে কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং প্রয়োজনে তাদের ঋণের ব্যবস্থা করা। যেন অর্থাভাবে কোনো উদ্যোক্তাদের পিছিয়ে পড়তে না হয়।’

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন শুধু শহরের নয়, গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাক ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা। সায়মার মতো নারীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে ব্যবসা করছেন, সেটাই আমাদের বাস্তবিক উদাহরণ।’

Print Friendly, PDF & Email

About newsdesk

Check Also

চবিতে শুরু হচ্ছে ডোপ টেস্ট, পজিটিভ হলে সিট বাতিল

🕒 অপরাধ ☰ বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ✒️নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) | নিউজ ডেস্ক- তালাশটিভি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *