চট্টগ্রাম | শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক | ছেলে ও পুত্রবধুর নির্মম নির্যাতনের শিকার জন্মদাত্রী মা, মেয়ে ও নাতনী। অদ্য ১৫ জানুয়ারী ২০২৩ রোজ রবিবার সকাল ৭টায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানাধীন আমিরাবাদ গোলামবারী সরকারি হাইস্কুল সংলগ্ন কলু হাজীর পাড়ার আহমদ হোসেনের ছেলে আলমগীর ও পুত্রবধু কোহিনূর আক্তারের নির্মম নির্যাতনের শিকারে গুরুতর আহত হয়ে রক্তাক্ত হয় মা আনোয়ারা বেগম, মেয়ে কুলছুমা বেগম ও নাতনী রাফিয়া। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় আহত ব্যক্তিরা লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয় এবং পরবর্তীতে আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সেখানে তারা দু’দিন চিকিৎসা সেবা শেষে থানার পরামর্শ মতে আদালতের শরণাপন্ন হলেও ছেলে ও পুত্রবধুর নির্যাতন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বৃদ্ধ মা, মেয়ে ও নাতনী।
জানা যায়, আনোয়ারা বেগম লোহাগাড়া থানাধীন আমিরাবাদ, গোলামবারী সরকারি হাইস্কুল সংলগ্ন কলু হাজীর পাড়ার আহমদ হোসেনের স্ত্রী। তিনি বাবার একমাত্র মেয়ে। আনোয়ারা বেগমের ৪মেয়ে ২ছেলে। তিনি তার মেয়ে কুলছুমা বেগম ও নাতনি রাফিয়াকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকেন। আনোয়ারা বেগমের স্বামীর মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে আলমগীর ও তার স্ত্রী কোহিনুর আক্তার ঘর আলাদা করে থাকে; মায়ের কোনো খোঁজ খবর নেয় না। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে তিলে তিলে যাকে নিজে না খেয়ে খাওয়ায় বড়ো করে সর্বস্ব হারিয়ে এবং ছেলেকে ২ গন্ডা সম্পত্তি দিয়েও আলমগীরের জন্মদাত্রী মাকে থাকতে হচ্ছে একটি ভাঙ্গা কুটির ঘরে। সেখানেও তার ছেলে ও পুত্রবধুর নির্মম নির্যাতন থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না।
তালাশটিভি টোয়েন্টিফোরকে কুলছুমা বেগম বলেন, পৈতৃক সম্পত্তি এককভাবে ভোগ করার জন্য আমার ভাই ও তার স্ত্রী মিলে আমাকে, আমার বৃদ্ধ মা ও মেয়েকে নানানভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। আমাদের খুবই খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করে ও মার ধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। এমনকি প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যাক্তিদেরকে অভিযোগ দিলেও কোনো সমাধান না পাওয়ায় নির্যাতন থেকে বাঁচতে লোহাগাড়া থানায় অভিযোগ করেছি; কিন্তু এতেও কোনো ধরনের সমাধান পায়নি। পরিশেষে নিরুপায় হয়ে সঠিক বিচারের আশায় ২০২৩ সালের জানুয়ারির শুরুতে চট্টগ্রাম আদালতে উপস্থিত হয়ে আমি আমার ভাই ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সি.আর মামলা ৩৬/২৩ দায়ের করি। উক্ত মামলার বিষয়টি তারা জানতে পেরে আমাদের উপর ক্ষেপে চরমভাবে নির্যাতন, গালিগালাজসহ মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
তৎপর তিনি আরও বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি সকাল ৭টায় আমি পুকুরে গেলে আমার ভাইয়ের স্ত্রী আমাকে পিছন থেকে ধারালো দা দিয়ে মাথায় আঘাত করলে আমি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যায়। আমাকে বাঁচাতে আমার মেয়ে রাফিয়া এগিয়ে আসলে সেও মামা-মামীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি; তাকে লোহার রড দিয়ে হাতে-পায়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে দেয়। এসময় আমাদের চিৎকার শুনে ঘটানাস্থলে এলাকার লোকজন এসে রক্তাক্ত অবস্থায় আমাদেরকে লোহাগাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে আঘাত গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। হাসপাতালে আমরা দু’দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। আমি, আমার বৃদ্ধ মা ও মেয়ে খুবই অসহায়, আমরা তাদের শাস্তি চাই।
এসময় আলমগীরের বৃদ্ধ মা আনোয়ারা বেগম তালাশটিভি টোয়েন্টিফোর’র প্রতিনিধিকে কেঁদে কেঁদে চিৎকার করে বলেন, আমি ন্যায় বিচার চাই, আমার ছেলে ও পুত্রবধুর শাস্তি চাই, আমি অসহায়, আশ্রয়হীন, আমাকে দেখার কেউ নাই, আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই আমি আইনি ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী মহোদয় ও তার সহধর্মিণী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর কাছে আমি সার্বিক সহযোগিতা ও ন্যায় বিচারের দাবি জানাই।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে সব খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24