
চট্টগ্রাম | মঙ্গলবার, ২১শে জুন ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
বাঁশখালী প্রতিনিধি:
বাঁশখালীর ছনুয়া ইউনিয়নের নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় আবদুল্লাহর দোকান এলাকায় পল্লী চিকিৎসকের চেম্বারে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় চেয়ারম্যানসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ১৫ই জুন ইউপি নির্বাচনের পরদিন ঘটনাটি সংঘটিত হয়। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কামাল উদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছেন। দায়েরকৃত মামলা নং- ৭১২/২০২২। সোমবার (২০শে জুন) চট্টগ্রাম বাঁশখালী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশীদকে প্রধান আসামি করে ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০০/১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী পল্লী চিকিৎসক রহিমা বেগমের স্বামী মোঃ সাগর। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় ২১শে জুন মঙ্গলবার।
মামলায় অভিযুক্তরা হলো- ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ছনুয়া ৭নং ওয়ার্ড মোস্তাক আহমদের পুত্র মোঃ হারুনুর রশীদ (৫৫), তার সহোদর আলমগীর কবির (৪৫), খোরশেদ আলম (৪৬), আবদুল আজিজ টিপু (৩২), মোঃ হারুনুর রশীদের পুত্র মোঃ শরীফ (২৩), একই এলাকার মৃত বশির আহমদের পুত্র হেফাজাতুল ইসলাম (৪০), র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত বাহাদুর ইসলামের পুত্র এমদাদুল ইসলাম (২৫), মৃত কালু সওদাগরের পুত্র ইউসুফ মাঝি (৫০), নুরুল আমিনের পুত্র মিজানুর রহমান (২৮), ছনুয়া ৬নং ওয়ার্ডের মৃত আবুল হোসেনের পুত্র নুরুল কাদের (৫৫), ৭নং ওয়ার্ডের আবদুল খালেকের পুত্র মোঃ ছরওয়ার আলম (৩০), ৮নং ওয়ার্ডের গোলাম রহমানের পুত্র নাজিম উদ্দীন (৪০), একই এলাকার মৃত নুরুল কাদেরের পুত্র আবদুল হামিদ (২৪), শেখেরখীল ৪নং ওয়ার্ডের মোস্তাক আহমদের পুত্র নুরুল ইসলাম বাদশা (২৮), ছনুয়া ৮নং ওয়ার্ডের মৃত সাজেদ উল্লাহর পুত্র আশেকুর রহমান (৩২), ছনুয়া ৬নং ওয়ার্ডের কাতেবপাড়ার নুরুচ্ছফার পুত্র তোফায়েল আহমেদ (৩৫), ৭নং ওয়ার্ডের নুরুল আলমের পুত্র মোঃ তৈয়ব (২৩), মৃত শামসুল আলমের পুত্র রাশেদুল মনির (৩৫), মৃত আবদুল খালেকের পুত্র ছৈয়দুল মোস্তফা (৪৫), হেদায়েত আলীর পুত্র আবদুল হাকিম (৫০), আহমদ আলীর পুত্র আবু সিদ্দিক (৩০),
ছনুয়া ৬নং ওয়ার্ডের মৃত ছালেহ আহমদের পুত্র আবুল খায়ের (৩৮), ৮নং ওয়ার্ডের মৃত বশির আহমদের পুত্র এহসানুল করিম (৩৫), মফিজুল করিম (৪৫), ৮নং ওয়ার্ডের মোঃ ইউনুছের পুত্র জাহেদ সোহান (২৫), ৭নং ওয়ার্ডের মোস্তাক আহমদের পুত্র মোঃ মফিজ (৩০), সিরাজ মিস্ত্রির পুত্র মুজিব (৩৫), ছনুয়া ৮নং ওয়ার্ডের নুর মুহাম্মদের পুত্র দেলোয়ার হোসেন প্রকাশ লম্বা মিয়া (৩৬), মৃত কালা মিয়ার পুত্র নুরুল হক (৪০), আবদুল মালেক প্রকাশ বান্ডারের পুত্র মোঃ আজিজ (৩০), মোঃ রিটন (২৮), নুরুচ্ছফার পুত্র আবদুর রহমান (২৬), মৃত বদিউল আলমের পুত্র শাহাদাত আলম (৩২), ছনুয়া ৭নং ওয়ার্ডের মৃত সাজেদ উল্লাহর পুত্র মোশাররফ হোসাইন (৩৫), মৃত জাফর আহমদের পুত্র রশিদ আহমদ (৪৫), আবদুর রশিদের পুত্র মোঃ টিপু (৩৫), মোঃ ইয়াসিন (৩১), মৃত খলিল আহমেদের পুত্র মোক্তার আহমদ (৫০), ছনুয়া ৭নং ওয়ার্ডের মনজুর আলম (৩৫), মৃত আবদুল জব্বারের পুত্র মোঃ ইসমাইল (৫৫), ছনুয়া ৯নং ওয়ার্ডের মৃত ছাবের আহমদের পুত্র মোঃ মহিউদ্দিন (৪৫), ৮নং ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমানের পুত্র গোলাম মোস্তফা প্রকাশ বাইশ্যা (৫২), মীর আহমদের পুত্র হোসাইন (৪৭), আবুল খায়েরের পুত্র মোঃ ইলিয়াস (৩৫), ৮নং ওয়ার্ডের মৃত নুর মোহাম্মদের পুত্র জাকের হোসেন (৩০), আমির হোসাইন (৩৮), ৯নং ওয়ার্ডের মনজুর আহমদের পুত্র আবদুল মোমেন (৩০), মৃত নজির আহমেদের পুত্র মোঃ কালু (৪৭) সহ আরো অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জন।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে দেশ-বিদেশের সব তাজা খবর পেতে ভিজিট করুন- talashtv24.com
মামলার অভিযোগে বাদী মোঃ সাগর উল্লেখ করেন, মামলার বাদী মোঃ সাগরের পুরো পরিবার রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। সেই সুবাদে গত ১৫ই জুন ইউপি নির্বাচনে ছনুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমান তালুকদারের পক্ষে কাজ করেন। এতে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ হারুনুর রশীদ সাগরের প্রতি ক্ষিপ্ত হন। গত ১৬ই জুন আনুমানিক বেলা ১১টায় উল্লেখিত আসামিগণসহ আরো অজ্ঞাত ১০০/১৫০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্র, লোহার রড, দা, কিরিচ ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আবদুল্লাহর দোকান এলাকাস্থ রহিমা বেগমের চেম্বারে হামলা করে। এসময় মামলার ১নং আসামি মোঃ হারুনুর রশীদ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে অন্যান্য আসামিদের নির্দেশ দেন। ২নং আসামি আলমগীর কবির ভুক্তভোগী হামিদকে ধারালো কিরিস দ্বারা মাথায় আঘাত করে ও বাদীর স্ত্রী রহিমা বেগমকে শ্লীলতাহানি করে এবং হাতে থাকা রড দিয়ে কোমরে পিঠে, উভয় হাতে বেধড়ক মারধর করে আহত করে।
৩ ও ৪নং আসামি রহিমা বেগমের গলায় থাকা ৭০ হাজার টাকা মূল্যের এক ভরি স্বর্ণের চেইন ও ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ৫নং আসামি ভুক্তভোগী ইলিয়াসকে লোহার রড দ্বারা হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করে। ৬, ৭, ৮ ও ৯নং আসামি রহিমা বেগমের দোকানে থাকা ৬৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ভাঙচুর করে এবং ৯নং আসামি ৪৮ হাজার মূল্যের আরেকটি ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়। ১০, ১১ ও ১২নং আসামি দোকানের ক্যাশ বক্সের তালা এবং বাক্সের টেবিল ভেঙে নগদ ১ লক্ষ ৮ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ১৩ থেকে ২০নং আসামিগণ দোকানে থাকা দু’টি আরএফএল টেবিল ও একটি ওয়ারড্রব এবং ঔষধ রাখার দুটি সেলফ ভাঙচুর করেন। ১৩ থেকে ৫০নং আসামিগণ দোকান ভাঙচুর করে দলবদ্ধভাবে বাদী মোঃ সাগরের বাড়িতে গিয়ে পার্কিং করে রাখা মোটর সাইকেল, বেলকনি ও জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মোঃ সাগর তালাশকে বলেন, ঘটনার পর বাঁশখালী থানায় গিয়ে এজাহার দিলে বাঁশখালী থানার ওসি আসামি হারুনুর রশীদকে বাদ দিয়ে মামলার এজাহার দিতে বলেন। আমি ওসির এমন কথায় রাজি না হয়ে অপারগ হয়ে সুষ্ঠ বিচারের স্বার্থে আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা করে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। এখন চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশীদ আমাকে ও আমার পরিবারকে চিরতরে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ায় আমি পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।