চট্টগ্রাম | বুধবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী (সাতকানিয়া):
দীর্ঘ একটি মাস সিয়াম সাধনার পর আল্লাহ পাকের কৃপায় আসে ঈদ আনন্দ। উৎসাহ উৎফুল্লতায় মুখরিত হয় প্রতিটি ঘরবাড়ি। এটা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য শ্রেষ্ঠ খুশির দিন। তাই এই খুশির ঈদকে নিজের মতো করে উপভোগ করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি মূলক মাহে রমজানের শেষের দিকে চলে কেনা-কাটার বেশ উৎসুক। এই উৎসব যদি হয় ইসলামের নীতি অনুযায়ী, তাহলে উদযাপনের পাশাপাশি নেকি ও লাভ করা যায়। ক্লেশে যেমন পুণ্য অর্জিত হয় তেমনি শরীয়াহ মোতাবেক হলে প্রফুল্লচিত্তেও তা সম্ভব। কিন্তু আমরা সীমা অতিক্রম করে ফেলি। রমজান মাস চলমান নারীরা বেরিয়ে পড়েছে বিভিন্ন মার্কেট শপিংমলে। পর্দা ও সতিত্যের কোনো খেয়ালই নেই তাদের।
চট্টগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের
আজকের সেহরী ও ইফতারের সময়ঃ
সেহরী- ০৪:১১ মিনিট ও ইফতার- ০৬:১৯ মিনিট।
প্রাসঙ্গিকত; পর্দা কাকে বলা হয়? শুধু মুখ ঢাকলেই, শুধু বোরকা পড়লেই কি পর্দা আদায় হয়ে যায়? যে পর্দায় পর পুরুষের দৃষ্টিনন্দন থাকে, (টাইট পিট বোরকা) যে পর্দায় পুরুষের সাথে গা ঘেঁষাঘেঁষি, চলাফেরা, কথা বলা আনন্দদায়ক তা কখনো সঠিক পর্দার আওতায় পড়ে না। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নারীরা সবকিছু উপেক্ষা করে বাজারে, নেকাব আর হিজাব যতই পড়ুক নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় নিজেকে সেফ রাখা তো আর সম্ভব হয় না। এতে না মাহে রমজানের সম্মান রক্ষা হচ্ছে, না রোজা’র সওয়াব আসা করা যাবে, না বলা যাবে সেফটি বিধান কিংবা সতিত্ব রক্ষা পাইতেছে? গ্রীষ্মের দিন রোজা নিয়ে মানুষের ভিড়ে পর পুরুষের ধাক্কাধাক্কিতে মার্কেটিং সুখের মনে হয় না। তবুও অনেককে দেখা যায় গর্ভের বুঝা নিয়েও সখের শপিং করে সন্তান, স্বামী, পরিবারের সবার জন্যে।
হাদিসে পাকে এসেছে, এমন একটা সময় আসবে নারীরা পর্দা করেও নগ্ন; এ থেকে উদ্দেশ্য টাইট পিট বোরকা এবং অপ্রয়োজনে বাজার হাটে চলাফেরা। হ্যাঁ; উপযুক্ত পুরুষ অভিভাবক না থাকলে ভিন্ন কথা। তবে প্রতি ঈদের সময়ের দৃশ্য গুলো খুবই দুঃখজনক। স্বামী’র বর্তমানে, অথবা উপযুক্ত পিতা, ভাই থাকা সত্বেও ঈদ শপিং এর জন্য বাজারে শুধু তরুণীদের সমাগম অহরহ দৃশ্যমান; লক্ষণ খুবই মারাত্মক, এ থেকে শিঘ্রই ফিরে না আসলে জাতি ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে। যাদের অধীনস্থ নারী ঘর ছেড়ে বাইরে যাওয়াতে কোনো প্রকার বাধাগ্রস্ত নন তারা প্রত্যেকে দাইয়ুসের লিস্টি ভুক্ত। তাদের জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ১. পিতা-মাতার অবাধ্যকারী। ২. দাইয়ুস (অর্থাৎ এমন পুরুষ, যে তার অধীনস্ত নারীদেরকে পর্দায় রাখে না)। এবং ৩. পুরুষের ন্যায় চলাফেরা করা নারী অর্থাৎ বেপর্দা নারী। (মুসতাদরাকুল হাকিম: ২৪৪)
পোশাক পরিচ্ছেদ হলো ইজ্জত আবরু, আপন সতিত্বের রক্ষাকারী; যা দ্বারা সেই তত বেশি নিরাপদ ও সম্মানিত যে যতটা পর্দা কে গুরুত্ব দেয়।
আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় হলো, ঈদের সময় নবপোশাকের আমদানি, ছেঁড়া ফাড়া জোড়াতালি হলেও নতুনত্বের চাহিদা। তারই পরিক্রমায় প্রতি বছর একেকটা শোনা ও দেখা যায়। যেমন- পাখি ড্রেস, কিরণমালা, ইত্যাদি। ঠিক তেমনি এ বছর বাজারে যে পোশাকের ব্যপক বিস্তৃতি তা হলো কাঁচা বাদাম ড্রেস। এতদিন কাছা বাদাম এর গান শুনলাম আর এখন নাকি পোশাকে পরিনত হয়ে গেল, কাছা বাদাম এবং পুষ্পা।
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হয় যে, ঈদ কিন্তু অমুসলিমদের নয়, তবুও এই ঈদকে পুঁজি করে সুকৌশলে তারা মুসলিম যুবতীদের দেহ প্রকাশের মাধ্যমে ঈমান আকিদা ধ্বংসের লক্ষ্যে মাঠে প্রস্তুত এবং এই কাজে তারা কৃতকার্য। কাঁচা বাদাম ড্রেসের খুব চাহিদা। এ ব্যাপারে রাজধানীর বিক্রেতা থেকে জিজ্ঞেস করা হলে প্রতুত্তরে বলেন, এক লাখ যদি মাল আনা হয় এক লাখই সেল হয়ে যাবে; এত বেশি চাহিদা কাঁচা বাদাম ড্রেসের। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো এত চাহিদার কারণ কি! উত্তরে বলা হয়, এর নাকি আলাদা বিশেষত্ব আছে; তা হচ্ছে একটি কাপড়ে নাকি ৭টি কালার বিদ্যমান। অন্যজনকে জিগাইলে তিনি বলেল, চাহিদা থাকবে না মানে! ইন্ডিয়ান কাপড়, চাহিদা অবশ্যই থাকতে হবে। ক্রেতাদেরও দেখা গেল প্রায়ই এই ড্রেসের জন্য ভীড় করছে।
যায় হোক কথা হচ্ছে যে, আমরা কেমন মুসলিম! পার্সেন্টেজ হিসেবে কত নিম্ন শ্রেণীর! ঐ তথাকথিত অশালীন নগ্ন ড্রেসের জন্য বেসামাল হয়ে পড়েছি! হায়রে বাঙ্গালী, ভিন্নদেশী কুৎসিত পোশাকে দেশীয় সংস্কৃতি লালন। তাছাড়া বাৎসরিক এই ঈদ উৎসবে মুসলমানের দেহে কেমনে উঠে বিজাতীয় পোশাক পরিচ্ছেদ? চিন্তার বিষয় যে, নিজেদের তৈরি পোশাক স্বজাতিদের পরিধানে অনিহা বরাবরই বিদ্যমান, আস্থা প্রীতি, মায়া ও গুরুত্ব ধর্মের প্রতি তো নাই, স্বদেশ তৈরি কৃত বস্তুর প্রতিও নাই। ঈমানের দুর্বলতার কারণে আজ এই পরিস্থিতি, সতিত্ব শালীনতা ভালো না লাগাতে দৌড়াইতেছি খোদা দ্রোহীদের পিছনে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুস্থ মস্তিষ্কে স্ব-জ্ঞানে প্রকৃত দেশপ্রেম বুকে ধারণ করা এবং দ্বীনের পথে চলার তৌফিক দান করুন-আমিন।
লেখক:- মুহাম্মদ ইউনুস আহমেদ
দাওরায়ে হাদিস কমপ্লিট,
জামিয়া জিরি মাদরাসা, চট্টগ্রাম।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে দেশ-বিদেশের সব খবর সবার আগে জানতে ভিজিট করুন- talashtv24.com/talashtv24