প্রকাশিত: বুধবার, ৩০শে মার্চ ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
নিউজ ডেস্ক : তালাশটিভি টোয়েন্টিফোর ডটকম
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ড দূর্নীতি, অনিয়ম এবং স্বজনপ্রীতিই এখন মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য এই বোর্ডটি বঙ্গবন্ধুর আমলে গঠিত হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের বরাদ্দ দেয়া কোটি কোটি টাকা নিরবে লুটপাট চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হোমিও কলেজ শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের হাত থেকে হোমিওপ্যাথি বোর্ডকে রক্ষার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সজেকা নোয়াখালীর তদন্ত কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পান। দুদক সজেকা নোয়াখালীর তদন্তে আরো উঠে এসেছে, ২০০৯ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের অস্থায়ী সহকারী রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল সেগুলিকে উপেক্ষা করে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে তিনি নিয়োগ নিয়েছেন। তার নিজস্ব প্রতিষ্টান 'হোমিওপ্যাথিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ' যা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ২০০৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিবন্ধিত। দেখা যায়, তিনি কখনো ঐ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আবার কখনো নির্বাহী পরিচালক। ডা: জাহাঙ্গীর আলম ১০নং মিরপুর হোমিও ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠান খুলে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে রমরমা সার্টিফিকেট বাণিজ্য করছে, যাহা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। চাকুরীতে নিয়োগ পেতে অভিজ্ঞতা হিসেবে নিজের জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সেজে প্রত্যয়ন পত্র নিয়েছেন আবার অন্য জনকে চাকরি দিতে নিজে চেয়ারম্যান সেজে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। পরস্পর যোগসাজশে একে অপরকে অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে অস্থায়ী সহকারী রেজিস্ট্রার পদটি হাতিয়ে নেন। যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিধির বহির্ভূত। বিশেষ করে এখানে পত্রিকায় প্রকাশিত ৫ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত লংঘন করা হয়েছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে ফলাফলের ক্রমানুসারকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এই বিষয়গুলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করে দেখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে দুদক নোয়াখালী (সজেকা) অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার পক্ষ হতে।
হোমিওপ্যাথি বোর্ডে চাকরি পাওয়ার পর কয়েক বছরের মধ্যে তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর কচুয়ায় বিলাস বহুল বহুতল ভবন নির্মাণ, ঢাকায় মিরপুরে ব্লক-১০, রোড-৪, বাড়ি-৫ রশিদ টাওয়ারে কোটি টাকার দু'টি ফ্ল্যাট ও দু'টি গাড়ি সাবেক মরহুম স্ত্রীর নামে এবং বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ অর্থ। জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে অর্থের বিনিময়ে অনাবিজ্ঞ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে যোগ্যতাহীন কলেজের অনুমোদন প্রদান। নিয়মনীতি না মেনে বার বার বিদেশ সফর। সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি রিকন্ডিশন বানিয়ে ১৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এবং আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতি বাংলাদেশের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও ফেডারেল হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ শামসুদ্দোজা আরিফ ও চট্টগ্রামের ভূক্তভুগী জৈনক ডাঃ উজ্জ্বল কান্তি দাশের অভিযোগে বলা হয়, সরকারের হোমিওপ্যাথি অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং হোমিও বোর্ড নীতিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথি বোর্ডের কার্যক্রম চলার কথা রয়েছে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে বোর্ডের রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এ সকল অধ্যাদেশ ও নীতিমালা উপেক্ষা করে সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অবৈধ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বিহীন নিয়োগবিধি ২০১৩ প্রণয়ন করে প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় কলেজগুলিতে অসংখ্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। বর্তমান রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হোমিওপ্যাথি বোর্ডে অস্থায়ী সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ নেয়। অথচ মাত্র ১ বছরের মাথায় কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অসাধু উপায় অবলম্বন করে স্থায়ী ও পূর্ণ রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি ভাঙ্গিয়ে নেন, অথচ বোর্ডের চাকুরী বিধি অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রেজিস্ট্রার কোনো পদই নেই, আছে শুধু ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদ । এগুলির বিভাগীয় সুষ্ঠু তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। বিগত ১ যুগ ধরে তিনি হোমিও বোর্ডের দায়িত্বে রয়েছেন। রেজিস্ট্রার হওয়ার পর থেকে তিনি বোর্ডের কিছু সদস্যকে সাথে নিয়ে অবৈধভাবে সারাদেশে নীতিমালা বহির্ভূত কলেজ অনুমোদন, শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ অনুমোদন ও পদোন্নতিতে কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান।
নিয়ম অনুযায়ী একটি নতুন অনুমোদিত কলেজে ১০-১৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে তিনি লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে প্রতিটি কলেজে ৩৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ বিভিন্ন পদে ৬০-৭০ জন লোক নিয়োগ ও অনুমোদন দিচ্ছেন। এসব নিয়োগ ও অনুমোদনে বোর্ডের কোনো নিয়মনীতি ও বিধি-বিধান মানছে না। কয়েকজন বোর্ড সদস্যদের নির্ধারিত অংকের টাকা দিলেই সব নিয়োগ বোর্ড মিটিংয়ে অনায়াসে পাস হয়। হোমিও বোর্ডের টেন্ডার কমিটি, নিয়োগ কমিটি, পরীক্ষা কমিটিসহ সব কমিটিতে সচিবের দায়িত্বে থাকার সুবাদে রেজিস্ট্রার ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। তাকে টাকা না দিলে কোনো কাজের অনুমোদন, বিল, নিয়োগসহ পরীক্ষক, প্রার্থী নির্বাচন এবং পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব ঘটানো হয়। রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কলেজের সরকারি অনুদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, তিনি বোর্ডের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রতি বছর সরকারি অনুদানের টাকা বিতরনের সময় প্রতিটি কলেজ থেকে মোটা অংকের টাকা অগ্রিম কমিশন হিসেবে নেন এবং ঘুষের বিনিময়ে একই কলেজকে বারবার অনুদান পাইয়ে দেন। আবার যেসব কলেজ কর্তৃপক্ষ কমিশন বা ঘুষ দিতে পারছে না তাদের অনুদান দেয়া হচ্ছে না। এ কাজে তিনি শিক্ষক সমিতির ব্যানারে গঠিত ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন করে থাকেন যাতে তার এসব অবৈধ আর্থিক লেনদেনের কোনো প্রমাণ পাওয়া না যায়। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক সমিতির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে খোঁজ নিলে এসবের প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে তথ্য পাওয়া যায়। একইভাবে তার বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য, বোর্ডের বিভিন্ন কাজ থেকে ব্যাপক অর্থ হাতিয়ে নেয়া, হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল সেন্টারের নামে দুর্নীতি, বোর্ডের গাড়ি ক্রয়ে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। হোমিওপ্যাথি বোর্ড রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আর কত দুর্নীতি করলে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ? এখন জাতি তা জানতে চায়।
অভিযোগকারীরা বলেন, দুদকের চূড়ান্ত তদন্ত ধামাচাপা দিতে এবং তার দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ না করার জন্য তিনি বিভিন্ন পন্থায় জোর তদবির করছেন। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম থেকে জানতে চাইলে তিনি গ্রহণযোগ্য কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। রেজিস্ট্রার ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্তের দায়িত্বে থাকা দুদক সেগুন বাগিচাস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকার উপ-পরিচালক জনাব আবু বক্কর সিদ্দিকীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেছিলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে। হোমিওপ্যাথি বোর্ডের রেজিস্ট্রার ডাঃ জাহাঙ্গীর আলমের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের বিষয়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্মিলিত জেলা কার্যালয় নোয়াখালীর একজন সহকারী পরিচালক বিভিন্ন ব্যক্তিদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জন, রাষ্ট্রীয় কর ফাঁকি দেয়া, বিধি বহির্ভূতভাবে বাংলাদেশ হোমিও বোর্ডের রেজিস্ট্রার হিসেবে ভূয়া ও মিথ্যা কাগজপত্র দাখিল করে চাকরি হাতিয়ে নেয়া ও ৫ম গ্রেডের সরকারি বেতন ভাতাদি গ্রহণ এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে দেশ-বিদেশী ডাক্তারী সনদ বাণিজ্যের অবৈধ ব্যবসাসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে সত্যতার প্রমাণ মিলে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মামলার অনুমতির জন্য প্রেরণ করা হয়। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে তদন্তের সমস্ত নথিপত্র দুদক সজেকা নোয়াখালী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জনাব তাহসিন সাহেবের নিকট প্রেরণ করা হয়।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে দেশ-বিদেশের সব খবর সবার আগে জানতে ভিজিট করুন- talashtv24.com অথবা talashtv24
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন
স্বত্ব © ২০২৪ তালাশটিভি২৪ www.talashtv24.com