প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
নিউজ ডেস্ক : তালাশটিভি টোয়েন্টিফোর ডটকম
বিশেষ প্রতিনিধি (সাতকানিয়া) :
সাতকানিয়ায় ইউপি নির্বাচনী সহিংসতায় শিশুসহ দু'জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন- আবদুস শুক্কুর (৪০) ও মো. তাসিফ উদ্দিন (১৩)। এছাড়া কেন্দ্র দখল করে জোরপূর্বক ব্যালটে সিল মারাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী এবং তাদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে দিয়ে ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সমাপ্তি হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ প্রায় ৫০জন আহত হয়েছে।
এদিকে, ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণে তিন ইউনিয়নের ৪ কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে। গত সোমবার বাজালিয়ায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত আবদুস শুক্কুর চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশের শুলকবহর এলাকার মৃত মো. ইউনুচের পুত্র এবং নলুয়ায় দায়ের কোপে নিহত শিশু তাসিফ দক্ষিণ মরফলা সুলতান চেয়ারম্যানের বাড়ি এলাকার রিকশা চালক জসীম উদ্দিনের পুত্র।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নলুয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছিল। বেলা এগারোটার দিকে ভোট কেন্দ্র থেকে প্রায় ১ শত গজ দূরে অন্যান্য লোকজনের মতো দাঁড়িয়ে থেকে নির্বাচনী দৃশ্য দেখছিল মরফলা আরএমএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. তাসিফ উদ্দিন। কিছুক্ষণ পর ৫০-৬০ জনের একটি দল সেখানে এসে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. লেয়াকত আলীর পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে উপস্থিত লোকজনকে মারধর শুরু করেন। তখন সবাই পালিয়ে গেলেও সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো শিশু তাসিফ। এ সময় তাকে দা দিয়ে ঘাঁড়ে কোপ দিলে মাটিতে লুঠিয়ে পড়ে তাসিফ। পরে লোকজন এগিয়ে এসে গুরুত্বর অবস্থায় তাসিফকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নলুয়া ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আবু হানিফ বলেন, কেন্দ্রের ভেতর কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। শুনেছি কেন্দ্রের বাইরে কিছু লোক দা দিয়ে কুপিয়ে এক শিশুকে হত্যা করেছে।
নলুয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে মোবাইল টিমের দায়িত্বে থাকা ঢেমশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক কামাল উদ্দিন বলেন, ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছি। শুনেছি ৫০-৬০ জনের একটি দল এসে লোকজনকে ধাওয়া করে। এ সময় সবাই চলে গেলেও শিশু তাসিফ যেতে পারেনি। তখন দা দিয়ে কুপিয়ে তাসিফকে হত্যা করা হয়। আমরা তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি।
এদিকে, বাজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বাজালিয়া বোর্ড অফিস কেন্দ্রের বাইরে প্রতিপক্ষের গুলিতে আবদুস শুক্কুর গুরুত্বর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে কেরানীহাট মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সাতকানিয়া থানার এসআই মাহাবুর রহমান বলেন, বাজালিয়ায় গোলাগুলির ঘটনায় লোকজন আহত হওয়ার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। পরে জানতে পারি বাজালিয়া গুলিবিদ্ধ আবদুস শুক্কুর নামে একজন নিহত হয়েছে। তার লাশ আমরা কেরানীহাট মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করি।
কেরানীহাট মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রাকিব উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই আবদুস শুক্কুর মারা গেছেন। তার পিঠে ও গলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বাজালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী তাপস কান্তি দত্ত বলেন, নিহত আবদুস শুক্কুর আমার কর্মী। স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল্লাহর পক্ষের লোকজনের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তাপস কান্তি দত্ত ভোট কেন্দ্র দখল করার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচ শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে এসেছে। তারা প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করেছে। মূলত তার বহিরাগত সন্ত্রাসীরা চিনতে না পেরে এক পক্ষ অপর পক্ষকে গুলি করেছে। এতে শুক্কুর নিহত হয়েছেন।
বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. আল আমিন বলেন, গোলাগুলির ঘটনাটি কেন্দ্রের বাইরে সংঘটিত হয়েছে। কেন্দ্রের ভেতর কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাতকানিয়ার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি ইউনিয়নে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে বাজালিয়া, নলুয়া, খাগরিয়া, চরতি, কাঞ্চনা, সোনাকানিয়া, ছদাহা, কালিয়াইশ, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশায় অধিকাংশ কেন্দ্রে গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ব্যাপক সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে। খাগরিয়ায় গনি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বোর্ড অফিস কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আখতার হোসেন ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মুহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় তেমন কেউ আহত হয়নি। এছাড়াও বাজালিয়া, চরতি, নলুয়া, কাঞ্চনা, ছদাহা, সোনাকানিয়ায় ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
কেন্দ্রগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া, জোরপূবর্ক ব্যালটে সিল মারাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় কাঞ্চনায় দায়িত্বপালনরত পুলিশ কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন (২৯), আবুল বশর (৪৫), আবদুল্লাহ আল নোমান (১৮), নূর মোহাম্মদ (৩৩), মো. আরিফ (২৮), আবু হানিফ (২২), জোবায়ের হোসেন (২৩), জিয়া উদ্দিন পারভেজ (৪৫), কামাল উদ্দিন (৪০), এমদাদ উল্লাহ (৪৫), লিয়াকত আলী (৪৫), মোহাম্মদ ওয়াহিদ (২০), শফিক আহমদ (৩৩), আবদুর রশিদ (৪০), শরফিন (১৮), এহছান (২৫), মোহামদুল হক (৩২), মোহাম্মদ রাবিক (২২), মিনহাজ (২৩), নোমান (৩৩), সেলিম উদ্দিন (৩৪), বোরহান উদ্দিন (২৮) ও সাগরসহ (২২) অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল জলিল বলেন, নির্বাচনী সহিংসতায় বাজালিয়া ও নলুয়ায় নিহত দু'জনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতকনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ভোটগ্রহণ শুরুটা বেশ শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোট কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ জোরদার ছিল। তবে দুপুরের দিকে বাজালিয়া ও নলুয়ায় ভোট কেন্দ্রের বাইরে সহিংসতায় দু'জন নিহত হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের ভেতর কোনো সমস্যা হয়নি। আমি মনে করি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর বা আপনার পাঠানো বিজ্ঞাপন দেখতে ভিজিট করুন- talashtv24.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন
স্বত্ব © ২০২৪ তালাশটিভি২৪ www.talashtv24.com