শিশুর প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা ও দায়িত্ব
প্রকাশিত : বুধবার, ৮ই ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
নিউজ ডেস্ক | ইসলাম | তালাশটিভি টোয়েন্টিফোর ডটকম
ধন-সম্পদ আর সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। শিশু সন্তান দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। যুগল জীবনের মহাসাফল্য, আদরের সন্তান যেন দুনিয়াতে উত্তম চারিত্রিক গুণে গুণান্বিত হতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় কাজ হলো শিশু ও শৈশব কাল থেকেই শিশুদের উত্তম শিক্ষায় গড়ে তোলা। শিশু সন্তান তার মা-বাবার কাছে মহান আল্লাহ তা’আলার আমনত। পবিত্র হাদিসে প্রিয় নবী (সা:) তাদের সঠিক যত্নের বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব বোঝাতে ঘোষণা দেন, ‘তোমাদের সন্তানের মালিক তোমরা নও, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে আমানত। তোমরা সবাই এ আমানতের সঠিক হেফাযত করো।’ (সহীহ বুখারি শরীফ)
তাই যেসব মা-বাবার শিশু সন্তান রয়েছে, তারা শিশুর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে। তাদেরকে শৈশবে সঠিক পরিবেশে সুন্দরভাবে উত্তম আদর্শ শিক্ষা দেবে। তবেই মহান আল্লাহর আমানতদারী পরিপূর্ণ হবে। শিশুদের ভালোবাসতে হবে। শিশুর কচি মনে মায়া-মমতা ও ভালোবাসার ছোঁয়া বা অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে। তবেই মা-বাবার প্রতি শিশুর ভালোবাসা তৈরি হবে। মা-বাবা বার্ধক্যে উপনীত হলেও তাদের প্রতি থাকবে সন্তানের ভালোবাসা। পবিত্র হাদিসে পাকে এসেছে- রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘তোমরা শিশুদের ভালোবাস এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করো, তাদের সঙ্গে ওয়াদা করলে তা অবশ্যই পূর্ণ করো। কেননা তারা তোমাদেরকেই রিজিকদাতা হিসেবে জানে।’ (মুসলিম শরীফ)
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে প্রমাণিত হয় যে- বাবা-মা, ভাই-বোন তথা সমাজের প্রতিটি মানুষের হৃদয় নিংড়ানো আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা, প্রীতি ও ভালোবাসা পাওয়া প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার। অথচ আফসোসের বিষয়! বর্তমান সময়ে শিশুদের ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা থেকে মানুষ অনেক দূরে সরে গিয়েছে। শিশুর কচি মনে ইসলামের সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে এমন কথা বলা থেকেও দূরে সারে যাচ্ছে মা-বাবা ও দায়িত্বশীলরা। গভীর রাত পর্যন্ত শিশুকে নিয়ে সজাগ থাকে বাবা-মা। যার ফলশ্রুতিতে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গঠন হয় না। যা পরবর্তী জীবনের উপর প্রভাব ফেলে। আবার যারা সন্ধ্যা রাতেই শিশুদের ঘুমাতে চেষ্টা করে; শিশুদের সঙ্গে তাদের কথা বলায়ও অজ্ঞতা প্রকাশ পায়।
অধিকাংশ পরিবারের মা-বাবা শিশুকে বলে থাকেন, দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ো। সকালে স্কুল আছে! না, সচেতন নাগরিক হিসেবে ধর্মীয় মূল্যবোধ থাকলে এ কথা কোনোভাবেই বলা যাবে না। বরং বলতে হবে- ‘দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ো; সকাল সকাল ওঠে নামাজ পড়তে হবে, কোরআন পড়তে হবে। তারপর প্রস্তুতি নিয়ে স্কুলে যেতে হবে। তবেই শিশুর কচি মনে ইসলামি মূল্যবোধ জাগ্রত হবে।’ প্রিয় নবী (সা:) এর উপদেশগুলোর ওপর কি আমল হচ্ছে? না, তাও হচ্ছে না। সবাই নিজেকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে যেন নিজস্ব গন্ডির বাইরে গিয়ে দৃষ্টি দেওয়ার মতো সময়ই তাদের হাতে নেই।
ইসলামের আভির্ভাবের প্রায় দেড় হাজার বছর পরও অসংখ্য শিশু পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে পাওয়া দয়া, মমতা ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। ক্ষুধার তাড়নায় শিশুরাও আজ পথে বসে। আবার এক শ্রেণির শিশুর পরিচয় প্রকাশ পায় ‘পথশিশু’ নামে। আর সহজ-কঠিনসহ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও শিশুরা জড়িত। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অবহেলিত সব শিশুদের প্রতি সামাজিক সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন। একটু দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনেই দুনিয়াটা শিশুদের জন্য স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হতে পারে। আসুন, শিশুদের প্রতি ভালোবাসার হাতছানি দেয়। প্রিয় নবি-রাসুলদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়।
প্রিয় নবী (সা:) এর এ হাদিস থেকেও সবার শেখার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। কিভাবে শিশুর প্রতি ভালো আচরণ করতে হবে কিংবা তাকে ভালো কাজের দিকে ধাবিত করতে হবে। শিশুদের ভালোবাসতে হবে। তাদের দায়িত্বের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা:) প্রতিটি শিশুকে ভালোবাসতেন, তাদের সঙ্গে সব সময় হাসি মুখে কথা বলতেন। তাদের মাথায় রহমতে পরিপূর্ণ মোবারকময় হাত বুলাতেন। তাদের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করতেন। তাদের কোলে নিতেন, কাঁধে তুলে নিয়ে ঘুরতেন, সালাম দিতেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব শিশুর জন্য দোয়া করা। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক শিশুদের নৈতিক শিক্ষা ও জীবন গঠনে সচেষ্ট থাকা। তবেই তারা পরবর্তী জীবনে মা-বাবা ও গুরুজনের প্রতি সৌজন্যবোধ ও দায়িত্ব পালনে অনুপ্রাণিত হবে। আল্লাহ তা’আলা সকল মুসলিম উম্মাহর সব বাবা-মা এবং দায়িত্বশীলদেরকে শিশুদের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন এবং কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।