‘জন্ম নিবন্ধন’ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা!
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৭ই ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
নিউজ ডেস্ক | ঢাকা | তালাশটিভি টোয়েন্টিফোর ডটকম
সরকার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করায় জন্ম সনদ করতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। সোমবার (৬ই ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি সেমিনার হলে ‘সুবিধাবঞ্চিত শিশুর সুরক্ষায় জন্ম সনদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিযোগ তুলে ধরেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) বৈঠকটির আয়োজন করে। বৈঠকে বক্তারা বলেন, সবার জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু এখনও দেশের সুবিধাবঞ্চিত বৃহৎ জনগোষ্ঠী নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। নানা জটিলতার কারণে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্ম সনদ নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এই জন্ম নিবন্ধন সনদ পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি প্রভাব ফেলছে অভিভাবক ও কোমলমতি শিশুদের ওপর। অভিভাবকদের সঙ্গে মানসিক চাপে ভুগছে সাধারণ শিশুরাও। এই মানসিক চাপ শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলেও মনে করেন তারা।
বৈঠকে আলোচকরা আরও বলেন, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য নিবন্ধন করতে গিয়ে যে সব সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা হলো অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু বিশেষ করে পথশিশুদের বাবা-মা কিংবা অভিবাবক নেই। সেক্ষেত্রে বাবা-মায়ের সনদ না থাকায় সংস্থার পক্ষ থেকে শিশুটির জন্ম সনদ করাতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু বস্তিবাসী এবং কর্মজীবী শিশুদের বাবা-মায়েদের বেশিরভাগেরই জন্ম সনদ নেই। আবার অনেকের জন্ম নিবন্ধন হাতে লেখা। হাতে লেখা সেই নিবন্ধনের বেশিরভাগই অনলাইনে নেই। এছাড়াও অনলাইনে থাকা অভিভাবকের জন্ম নিবন্ধন ভুলে ভরা। অনেক ক্ষেত্রে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের বাংলা এবং ইংরেজি নামের সাথে কোনও মিল নেই। অনলাইনে শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন চাওয়া হয়। বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধনের জন্য যখন আবেদন করতে চাওয়া হচ্ছে, সেখানে আবার তাদের বাবা-মায়ের জন্ম নিবন্ধন নম্বর চাওয়া হয়। সেটি ছাড়া আবেদন নেওয়া হয় না। অথচ বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগে, তাদের জন্ম নিবন্ধনও নেই। এসব নানা কারণে জন্ম নিবন্ধন পাওয়া নিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোতাকাব্বির আহমেদ বলেন, ‘সবার মতামত নিয়েই জন্মনিবন্ধন আইন করা হয়েছে। এই আইনের কারণে নিবন্ধন করতে গিয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভোগান্তি হয় এবং আইন সংশোধন করা যদি প্রয়োজন মনে হয়, তবে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘জন্ম নিবন্ধনকে একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও জটিলতা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা সেই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কোনও আইনের মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তি হোক সেটা সরকার চায় না। প্রয়োজন হলে জন্ম নিবন্ধন আইনকে সংশোধন করা হবে। জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা হবে। তবে এ নিয়ে সাধারণ মানুষকেও আরও সচেতন হতে হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আব্দুস শহিদ মাহমুদ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মুনীরা সুলতানা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিস্ট জামিলা আকতার, দীপ্ত টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়াদ চৌধুরী, সেবা নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সাইদা রোক্সানা খান, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন এক্সপার্ট আজমী আকতার, স্ক্যান বাংলাদেশের মহাসচিব মো: মনিরুজ্জামান, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন, শাপলা নীড়ের কর্মসূচি কর্মকর্তা মাহফুজা পারভীন, এসওএস বাংলাদেশের উপ-পরিচালক হোসেইন আসিফ ও কর্মসূচি কর্মকর্তা মো: আনিসুর রহমান।