২১/১২/২০২৪ ইং
Home / অন্যান্য / অপরাধ / চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মিথ্যা অপবাদে বয়স্ক দম্পতিকে নির্যাতনের মামলা নিয়ে পুলিশের লুকোচুরি!

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মিথ্যা অপবাদে বয়স্ক দম্পতিকে নির্যাতনের মামলা নিয়ে পুলিশের লুকোচুরি!

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মিথ্যা অপবাদে বয়স্ক দম্পতিকে নির্যাতনের মামলা নিয়ে পুলিশের লুকোচুরি!

প্রকাশিত: রবিবার, ২৭শে জুন ২০২১ খ্রিস্টাব্দ

মোঃ হাসান মিয়া (স্টাফ রিপোর্টার):

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মিথ্যা চুরির অপবাদে বয়স্ক দম্পতিকে নির্যাতনের মামলা নিয়ে লুকোচুরির খেলার অভিযোগ উঠেছে চন্দনাইশ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। গত ৬ই জুন সংঘঠিত ঘটনায় পুলিশকে নিয়মিত মামলা রেকর্ড করতে কোর্ট নির্দেশ দিলেও গত পাঁচ দিনেও মামলার ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি চন্দনাইশ থানা পুলিশ। উল্টো মামলার বাদীসহ ভিকটিমের পরিবারকে মামলা আপোষ মিমাংসা করতে নানাভাবে হুমকি ধমকিসহ চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। মামলার অভিযুক্ত আসামীরা  প্রভাবশালী হওয়ায় প্রান ভয়ে এলাকায়ও যেতে পারছেনা ভিকটিমের পরিবার। সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন মামলার বাদী ভিকটিম হামিদা আকতারের ভাই ফারুক ইকবাল টিপু।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে চাচাত ভাইরা মেজবানি অনুষ্ঠানে কাজ করার কথা বলে গত ১৬ই জুন তাঁর বোন হামিদা আকতার ও ভগ্নিপতি আবদুল হাকিমকে শহর থেকে চন্দনাইশে চাচাতো ভাই গোলাম আজাদ শিশুর ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী রিফা খানের স্বর্ণের চেইন চুরির অভিযোগ আনা হয়। ভিকটিম দম্পতি স্বর্ণের চেইন চুরির বিষয় অস্বীকার করলে দুজনকে বাড়ীর দ্বিতীয় তলার আলাদা দুটি কক্ষে নিয়ে পিছমোড়া বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় চাচাতো ভাই গোলাম আজাদ শিশু, মিজানুর রহমান, কে.এম ইলিয়াছ প্রকাশ ফিরোজ, চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী রিফা খান মিলে বৈদ্যুতিক পাইপ, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগিরা পরেরদিন ১৭ই জুন চন্দনাইশ থানায় মামলা করতে গেলে অভিযুক্তরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ দু’দিন ঘুরানোর পরও মামলা নেয়নি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগিরা চট্টগ্রাম আদালতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিহান সানজিদার কোর্টে সি.আর মামলা (১৯৪/২০২১) দায়ের করেন। বিচারক বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে তা নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে চন্দনাইশ থানার ওসিকে নির্দেশ দিলেও বিগত পাঁচ দিনেও পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করেনি। উল্টো মামলার আসামীদের সাথে আতাঁত করে মামলার বাদী পক্ষকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি ধমকিসহ নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে অব্যাহত রেখেছে। পুলিশের এমন পক্ষপাত মুলক আচরনে এ ঘটনার ন্যায় বিচার নিয়ে শংকিত ভিকটিমের পরিবার। পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও আশংকায় রয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে স্বর্ণ চুরির কোন ঘটনা না ঘটলেও নিছক পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই তাঁর চাচাতো ভাইরা এ ঘটনা ঘঠিয়েছে। এলাকায় নিজেদের পৈত্রিক সম্পদ আত্মসাৎ করার মানসেই চুরির অপবাদ দিয়ে পুরো পরিবারকে এলাকা ছাড়া করতেই এমন মিথ্যা বানোয়াট কল্প কাহিনী সাজিয়েছে। ফারুক ইকবাল টিপু বলেন, পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন না করে উল্টো অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে ভিকটিমের পরিবারকে নানাভাবে নাজেহাল করছে।

এ ব্যাপারে সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান। এসময় ভিকটিম হামিদা আকতার, আবদুল হাকিম, বোন নাজমুন আকতার, ফারজানা আকতারসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে একদিন একরাত আটকে রেখে বয়স্ক এ দম্পতিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পর ভিকটিম হামিদা আকতারের শরীরের পছন ধরেছে। অনেকটা পঙ্গুত্বের দিকে এগুচ্ছে তার শারিরীক অবস্থা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতরর জখম নিয়ে বর্তমানে বিছানায় কাতরাচ্ছেন তিনি। একই অবস্থা হামিদার স্বামী অপর ভিকটিম আবদুল হাকিমেরও।

উল্লেখ্য, গত ১৬ই জুন চাচীর মেজবানি অনুষ্ঠানে কাজ করার কথা বলে শহর থেকে ডেকে নিয়ে পরে চুরির অপবাদ দিয়ে হামিদা হাকিম দম্পতিকে আটকে রেখে বিভৎস নির্যাতন তাদের চাচাত ভাইরা। এসময় অভিযুক্ত চাচাতো ভাই গোলাম আজাদ শিশু, মিজানুর রহমান, কে.এম ইলিয়াছ প্রকাশ ফিরোজ, চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী রিফা খানসহ মিলে বৈদ্যুতিক পাইপ, লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ ছাড়া প্লাস দিয়ে ভিকটিম  হামিদা আক্তারের পায়ের আঙ্গুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়। নির্যাতনের শিকার হামিদা আকতার বলেন চুরির বিষয়ে অস্বীকার করলেও তারা তার শরীরের স্পর্শকাতর বিভিন্নস্থানে বৈদ্যুতিক তার দিয়ে পিটিয়ে জখমসহ ইলেকট্রিক সর্ট দেয়। অন্যরুমে তাঁর স্বামী আবদুল হাকিম (৬০) কেও একই কায়দায় নির্যাতন করা হয়।

এক পর্যায়ে হামিদা আকতারকে জোর পূর্বক নেশা জাতীয় টেবলেট খাওয়ানোর পর শিকারোক্তি আদায়ের প্রচেষ্টা করা হয়। এসময় নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অপরাধ না করেও স্বর্ণের চেইন চুরির বিষয়ে স্ট্যাম্পে শিকারোক্তিমুলক অঙ্গিকার দেন এ দম্পতি। পরে ভিকটিমের ভাই টিপু সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় একদিন পর এ দম্পতিকে উদ্ধার করে নির্যাতনের শিকার হামিদা আক্তার (৪২) ও আবদুল হাকিম (৬০ কে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করান।

সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিম হামিদার ভাই টিপু বলেন ,যদি তাদের স্বর্ণ চুরি হয়ে থাকে তাহলে তারা থানায় মামলা করতে পারেন। কিন্তু কোন প্রকার আইনের আশ্রয় না নিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এভাবে নির্যাতন করার ঘটনার বিচার দাবী করেন। এদিকে এ ব্যপারে অভিযুক্ত কে.এম ইলিয়াছ মিয়া প্রকাশ ফিরোজ বলেন, স্বর্ণ চুরির ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতেই এ দম্পতি ও তাদের আত্মীয়রা মিলে নির্যাতনের মিথ্যা গল্প সাজাচ্ছে। তিনি বলেন, তাদেরকে কোন প্রকার মারধর করা হয়নি। স্বর্ন চুরির বিষয়টি নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে চন্দনাইশ থানার ওসি নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। কোর্টের নির্দেশনা পেলে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

About newsdesk

Check Also

চবিতে শুরু হচ্ছে ডোপ টেস্ট, পজিটিভ হলে সিট বাতিল

🕒 অপরাধ ☰ বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ✒️নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) | নিউজ ডেস্ক- তালাশটিভি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *