মাদ্রাসায় 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' স্থাপন না করলে এমপিও বন্ধ!
প্রকাশিত: শনিবার, ২৬শে জুন ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের সাধারণ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে অনেক আগেই। অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন করে উন্নতভাবে 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' স্থাপনা করছে। কিন্তু সরকারের একাধিক নির্দেশনার পরও দেশের মাদ্রাসাগুলোতে এখনও 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' স্থাপন পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে দেশের মাদ্রাসাগুলোয় ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে কিনা তার সচিত্র প্রমাণ চেয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। অন্যদিকে 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' না করলে মাদ্রাসার উচ্চশিক্ষা স্তরের অভিভুক্তি নবায়ন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে, যেসব মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' স্থাপন করেনি সেসব প্রতিষ্ঠানের এমপিও ও নতুন করে কোনও শিক্ষকের এমপিও দেওয়া হবে না। এমনকি শিক্ষকদের পদোন্নতি, নতুন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ এবং উচ্চতর গ্রেডসহ যাবতীয় আবেদন বিবেচনা করবে না মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এম. রুহুল আমিন বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' করবে না তাদের এমপিও, পদোন্নতি, উচ্চতর স্কেলসহ যাবতীয় কাজ আটকে দেবো। যাতে কর্তৃপক্ষ 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' করেন। অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়, অনেকেই আগ্রহ দেখায় না। যাতে দেশের সকল মাদ্রাসায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন নিশ্চিত হয়, সে জন্যই এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করি দেশের সকল মাদ্রাসায় 'বঙ্গবন্ধু কর্নার' স্থাপন হবে, সরকারি এ কার্যক্রমে সবাই সহযোগিতা করবেন।’
এর আগে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপনের নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ স্থাপন করার তথ্যও চায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেক মাদ্রাসা থেকে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপনের তথ্য পাঠানো হয়নি। সে কারণে সব আঞ্চলিক উপ-পরিচালকদের আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে তথ্য পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ২১শে জুন সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহফুজা ইয়াছমিন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করে সচিত্র প্রমাণ এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা জেলা শিক্ষা মাধ্যমিক অফিসার অথবা উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের প্রত্যয়ন হার্ড কপিতে ডাকযোগে বা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠাতে হবে। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি, অধ্যক্ষ, সুপার, ইবতেদায়ি প্রধানদেরও তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় অফিস আদেশে।
অফিস আদেশে জানানো হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপনের প্রমাণসহ তথ্য পাঠাতে ব্যর্থ হলে আগামী জুলাই মাস থেকে মাদ্রাসার নতুন এমপিও, বিএড, বিএমএড, উচ্চতর গ্রেড, বদলি, নিয়োগ, পদোন্নতি, বকেয়া, ইনডেক্স ডিলিট, ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়ন, জন্ম তারিখ সংশোধন, নাম ও হিসাব নম্বর সংশোধনসহ অন্যান্য আবেদনপত্র অনলাইনে বা সরাসরি দাখিল করা হলে তা বিবেচনা করা হবে না।
এদিকে চলতি বছরের ১৯শে মার্চ সারাদেশের উচ্চ শিক্ষা স্তরের অধিভুক্ত এক হাজার ৫০০ মাদ্রাসায় ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’ তৈরির নির্দেশনা দেয় ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ জানিয়েছেন, ‘মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু চেতনা ছড়িয়ে দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই কর্নারের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। ফলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কোনও শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকবে না।’
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন চলছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ৮০০ থেকে ৯০০ মাদ্রাসা সম্পন্ন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ দফতর সূত্রে জানা গেছে, ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন না করলে অধিভুক্তি নবায়ন করা হবে না বলে মাদ্রাসাগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ফাজিল স্নাতক, ফাজিল ডিগ্রি, কামিল ও কামিল (পাস কোর্স) মাদ্রাসা মিলিয়ে মোট অধিভুক্ত মাদ্রাসা রয়েছে ১ হাজার ৫০০টি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন
স্বত্ব © ২০২৪ তালাশটিভি২৪ www.talashtv24.com