২১/১২/২০২৪ ইং
Home / অন্যান্য / অপরাধ / ‘অনলাইন গেমস’ যেন ডিজিটাল ড্রাগ!

‘অনলাইন গেমস’ যেন ডিজিটাল ড্রাগ!

‘অনলাইন গেমস’ যেন ডিজিটাল ড্রাগ!

প্রকাশিত: শনিবার, ২৬শে জুন ২০২১ খ্রিস্টাব্দ

মোঃ হাসান মিয়া (স্টাফ রিপোর্টার):

প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কিন্তু প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন বিকালে শিশু-কিশোরদের মাঠে খেলতে দেখা যায় না। তারা বাড়ির কোনো এক স্থানে বসে মত্ত থাকে অনলাইন ভিডিও গেমস খেলায়। এভাবেই কাটিয়ে দেয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

এক তথ্যমতে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৩৫ শতাংশ হচ্ছে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী, অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরী। এরাই কিন্তু বর্তমানে গেমিংয়ে আসক্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্লাসিফিকেশন অব ডিজিজের ১১তম সংশোধিত সংস্করণে (আইসিডি-১১) গেমিংয়ে আসক্ত হওয়াকে একটি মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা হিসাবে দেখা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে প্রকাশিতব্য আইসিডি-১১ শীর্ষক রোগনির্ণয় গাইড বুকে এটি সংযুক্ত করা হয়েছে।

অর্থাৎ বলা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনলাইন গেম, মুঠোফোন, কম্পিউটার বা ভিডিও গেমের ক্ষতিকর ব্যবহারকে রোগ হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা এসব গেম তৈরি করছে, তারা নিজেদের সন্তানদের এসব আবহ থেকে দূরে রাখছে। জনপ্রিয় ডিজিটাল প্রতিটি গেমই সন্ত্রাস-সহিংসতা, যুদ্ধ আর মৃত্যুর গল্প দিয়ে রচিত।

অস্ট্রেলিয়ার দিয়াকিন ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. হেলেন ইয়ং তার ‘ভায়োলেন্স অ্যান্ড দ্য ফার-রাইটস’ নিবন্ধে লিখেছেন, সন্ত্রাসনির্ভর ভিডিও গেমগুলো সন্ত্রাস-সহিংসতার সাধারণীকরণের ষড়যন্ত্র। এর মাধ্যমে মানুষের ভেতরের অপরাধ প্রবণতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। হত্যা-খুনকে স্বাভাবিক বিষয় হিসাবে ভাবতে শেখানো হচ্ছে তরুণদের। ফলে মানুষের মধ্যে নৈতিকতা হারিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় কাউকে অন্যায়ভাবে মারতে দেখলেও এখন কেউ আর এগিয়ে আসে না।

গেম নির্মাতাদের মূল লক্ষ্য ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তি তৈরি করা। বাস্তবেও বিশ্বের কোটি কোটি কিশোর-তরুণ ভিডিও গেমসে আসক্ত। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা-সংস্কৃতি বিনষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ে পড়ছে মেধাহীন। এ আসক্তি তাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। কখনো কখনো আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর পথও বেছে নিচ্ছে অনেকে।

গত ২১শে মে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী মোবাইল ফোনে ‘ফ্রি ফায়ার গেম’ খেলতে না পেরে মায়ের ওপর অভিমান করে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

সম্প্রতি দিনাজপুরের বিরামপুরে ‘ফ্রি ফায়ার গেম’র ডেটা কেনার টাকা জোগাড় করতে না পেরে রিপন নামের এক স্কুল শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। দেশে অনলাইনভিত্তিক এক জরিপে দেখা গেছে, এ বছর ভিডিও গেমকে কেন্দ্র করে আত্মহত্যা করেছে প্রায় ১৭ জন।

বিশেষজ্ঞরা ভিডিও গেমের আসক্তিকে মাদকের চেয়েও ভয়ংকর বলে উল্লেখ করেছেন, যার নাম দিয়েছেন ‘ডিজিটাল ড্রাগ’। একজন মাদকাসক্ত মাদক না পেলে যেমন অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে, তেমনি অনলাইন গেমে আসক্তরা গেম খেলতে না পেরে আত্মহত্যা করতেও দ্বিধা করে না।

মাদকাসক্তির মতোই অনলাইন গেম থেকে বের হয়ে আসা অনেক কঠিন। তবে তীব্র ইচ্ছাশক্তি ও সংস্কৃতিচর্চা বা সেবামূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে এ আসক্তি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। এর ভয়াবহতার কথা বিবেচনা করে ভারত, নেপাল, জাপান, ইরানসহ অনেক দেশ পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশেও এ নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হলেও অদৃশ্য কারণে তা এখনো বন্ধ করা হয়নি। বাংলাদেশেও এসব সন্ত্রাসনির্ভর গেম অচিরেই বন্ধ করা জরুরি। তাছাড়া এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া দরকার।

সন্তানদের অনলাইন দুনিয়ার মানবিক ও সুস্থ বিনোদনের উপায়গুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত। তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। ধর্মীয় বা নৈতিক শিক্ষার আগ্রহী করে তোলা উচিত। মাঠে খেলাধুলার ব্যবস্থা করা জরুরি।

Print Friendly, PDF & Email

About newsdesk

Check Also

চবিতে শুরু হচ্ছে ডোপ টেস্ট, পজিটিভ হলে সিট বাতিল

🕒 অপরাধ ☰ বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ✒️নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম) | নিউজ ডেস্ক- তালাশটিভি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *