নগরীর জলবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে ‘চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম’র সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪শে জুন ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
মোঃ হাসান মিয়া (স্টাফ রিপোর্টার) :
চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবী জলবদ্ধতার নিরসন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এস. রহমান হলে আজ ২৩শে জুন বুধবার বেলা ৪টায় এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের মহাসচিব মো: কামাল উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- খাতুন গঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সাধারণ সম্পাদক চেম্বার পরিচালক সৈয়দ সগির আহমদ, বিশিষ্ট লেখক গবেষক নেসার আহমদ, দোকান মালিক ফেডারেশনের সভাপতি সালামত আলী, নাগরিক ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান হাসিনা জাফর, ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আলী, মোহাম্মদ ফোরকান, বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাপুর রহমান, প্রিন্সিপাল মো: আলমগীর, নাগরিক ফোরামের নেতা এজিএম জাহাঙ্গীর আলম, মো: মহিউদ্দিন, আকরাম হোসেন, তসলিম খাঁ, আনিস খোকন, মো: রাকিব, লাভলি ডিও, তানিয়া প্রমুখ। সৈয়দ সগির আহমদ এক পরিসংখ্যানে বলেন, জলবদ্ধতার কারণে চাক্তাই খাতুন গঞ্জে ২০০৫ সাল থেকে অন্তপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরও জলবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয় নাই।
লেখক নেসার আহাম্মদ বলেন- চট্টগ্রাম জাতীয় রাজস্বে ৬৬ শতাংশ যোগান দিয়ে থাকেন সেই তুলনা চট্টগ্রামের উল্লেখ যোগ্য উন্নয়ন হয়নি। আমাদের চট্টগ্রাম শুধু শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, চট্টগ্রাম এখন মিরাসরাই, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, কর্ণফুলীর অংশ বিশেষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই শহরকে জনবান্ধব শহর করার জন্য জলবদ্ধতা নিরসনের বিকল্প নেই।
দোকান মালিক ফেডারেশনের নেতা সালামত আলী বলেন, প্রতি বর্ষাকালে চট্টগ্রাম শহরের সাধারণ দোকান মালিকেরা জলবদ্ধতার কারণে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।
হাসিনা জাফর বলেন, আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে যতদিন পর্যন্ত জলবদ্ধতার সমস্যার সমাধান হবে ততদিন পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করে যাব। বন্দর নেতা মো: ফোরকান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির যোগান দাতা কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বন্দরের উপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাজী নুর আলী বলেন- চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের আন্দোলন সংগ্রাম কোন ব্যক্তি বিশেষ নয়। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের পক্ষের ঘোষিত এই দাবী সমূহ বাস্তবায়ন হয় তাহলে নগরীতে জলবদ্ধতা আর থাকবেনা।
এ যাবৎ জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের ১৭ শত কোটি টাকার যতটুকু কাজ হয়েছে সিডিএ যেন অবশ্যই তার একটা বিবরণ নগরবাসীর কাছে প্রকাশ করেন।
আগামী বছরের মধ্যে বাকি কাজ গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেকোনো মূল্যে সমাপ্ত করতে হবে। এখনই এ জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে আদো স্থায়ীভাবে এবং দীর্ঘমেয়াদী ভাবে সমস্যা সমাধান হবে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে, কারণ এই প্রকল্পের মূল উৎস হচ্ছে ১৯৯৫ সালের মাষ্টার প্ল্যান, বাস্তবায়ন হচ্ছে ২০ বছর পরে । এর মধ্যে পরবর্তিতে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন চট্টগ্রামে হয়েছে এবং সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা মনে ও প্রকল্পটির একটা পর্যালোচনা হওয়া উচিত এবং এতে নতুন বিকল্প খাল গুলি করার ব্যপারে যেখান যেখানে প্রয়োজন তা করার উদ্যোগ নিতে হবে। আর দুই বছর পরে যেন দেখতে না হয় সমস্যা আগের মতোই রয়ে গেছে কিন্তু অর্থগুলি সম্পূর্ণ ঠিকই খরচ হয়ে গেছে।
কর্ণফুলির নিয়মিত ড্রেজিং অবশ্যই জরুরী। পরিবেশ রক্ষা তথা যার যার এলাকার খাল-ড্রেনগুলিতে ময়লা-আবর্জনা, পলিথিনে ব্যাগ না ফেলা, ইত্যাদির বিষয়ে নাগরিক সচেতনতার জন্য সরকারী ভাবে এবং স্থানীয় কতৃপক্ষের উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয়ভাবে যারা মসজিদের ইমাম- খতিব, মন্দির-গির্জা ইত্যাদির প্রধানদের, স্কুল শিক্ষক, সামাজিক ক্রীড়া-সাংকৃতিক সংগঠন এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের দায়িত্ব দিতে হবে জনগণকে এসব বিষয় নিয়ে সচতন করা। যারা বিধিনিষেধ মানবে না তাদের জরিমানা করা যেতে পারে। এভাবে জনগণের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে গণ-সচেতনতার মাধ্যমে নাগরিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পাবে এবং উন্নত মানের ভবিষৎ নাগরিক সৃষ্টির জন্য আমরা উৎসাহিত করতে পারবো। তাহলে আমাদের চট্টগ্রাম হতে পারবে বিশ্বমানের।
চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়র সাহেব এবং এমপিরা এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে কোন বাঁধা থাকবে বলে আমাদের মনে হয়না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সকল ড্রেন, খাল ও কালভার্ট এর নিয়মিত সংস্কার ও পরিষ্কার করা নিশ্চিত করবে। অন্যান্য সংস্তাগুলির সাথে সমন্বয় সাধন করবে। এই সব দাবিগুলি নিয়ে জনমত ও জনসচেনতা সৃষ্টি করা এবং যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনার দাবিতে আগামী ৩রা জুলাই (শনিবার) বিকেল সাড়ে ৩ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম এর উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানববন্ধন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।