ইসলামকে মুছে ফেলতে চাই চীন- অ্যামনেস্টির রিপোর্ট
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১১ই জুন, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চীনের উইগুরদের নিয়ে নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে অভিযোগ করা হয়, দেশটি ইসলামকে মুছে ফেলতে চাইছে। ১৬০ পাতার এ রিপোর্টের শিরোনাম, ‘আমরা যেন যুদ্ধে শত্রুপক্ষ’। অ্যামনেস্টি ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে গত মে পর্যন্ত এ গবেষণা পরিচালনা করেছে। তারা ১২৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তার মধ্যে ৫৫ জন চীনের উইগুর শিবিরে ছিলেন। আর ৬৮ জন সেই সব পরিবারের সদস্য, যাদের কেউ হারিয়ে গেছেন বা আটক করা হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
রিপোর্ট বলছে, শিনজিয়াং -এ ১০ লাখের বেশি মানুষকে শিবিরে পাঠানো হয়েছে। মুসলিমদের ভয় দেখানোর জন্য চীন তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থানগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। প্রচুর সাক্ষী অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, চীন ইসলামকেই মুছে ফেলতে চায়। মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এমনকি মসজিদে ও মুসলিমদের বাড়িতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং -এর ছবি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা চীনে নিজেদের ধর্মাচরণ করতে ভয় পাচ্ছেন। জানেন যে, রাষ্ট্র তাদের ওপর নজর রাখছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, কোনো রকম সতর্কতা ছাড়াই উইগুরদের মাঝরাতে বাড়ি থেকে তুলে শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের তথাকথিত শিক্ষা-শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোর করে নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করানো হয়। তারপর তাদের মধ্যে কিছু মানুষকে শিবিরে রাখা হয়, কারণ দেখানো হয়; যাতে তারা সন্ত্রাসবাদী এবং বিশ্বাসযোগ্য নয়।
যাদের শিবিরে আটকে রাখা হয়েছিল, তাদের কয়েকজন মানবাধিকার সংস্থাটিকে বলেছেন, শিবিরের অবস্থা চীনের কারাগারের থেকেও খারাপ। তাদের সংশোধন-ক্লাসে যেতে হয়। তার আগে সারা দিন তাদের বসিয়ে রাখা হয়। শিবিরের ক্লাসে তাদের ইসলামের ‘খারাপ’ দিকগুলো বাধ্যতামূলকভাবে শিখতে হয়।
উইগুরদের অমানবিক অবস্থা তুলে ধরে মানবাধিকার সংগঠনটি কিছু দাবি জানিয়েছে। তন্মধ্যে, শিবির থেকে চীনকে সব উইগুরকে মুক্তি দিতে হবে; যদি না তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অকাট্য প্রমাণ থাকে এবং চীনকে এই শিবির বন্ধ করতে হবে। উইগুরদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অত্যাচার ও তাদের হেনস্তা করা বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ শিনজিয়াং -এ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ও অপরাধের তদন্ত করতে আন্তর্জাতিক দল পাঠাবে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল জানিয়ে দেবেন, চীন বেআইনি কাজ করেছে এবং তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।
এ রিপোর্ট প্রসঙ্গে অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড ডয়চে ভেলেকে বলেন, “চীন মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছে, তা তথ্যসহ রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দেশগুলো যেন সাহসী হয়ে উপায় ঠিক করে এবং চীনকে এই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করে। আমরা যে তথ্যপ্রমাণ দিয়েছি, তারপর দেশগুলোর পক্ষে চুপ করে থাকা মুশকিল।”
আমেরিকা ইতিমধ্যেই উইগুরদের প্রতি চীনের নীতিকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে। চীন অবশ্য বরাবরই কোনোরকম অত্যাচারের কথা অস্বীকার করেছে। তাদের অভিযোগ, ঘরোয়া বিষয়ে বাইরের দেশগুলো হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে।