পুলিশ আতঙ্কে দুই শতাধিক পরিবার পুরুষশূন্য!
প্রকাশিতঃ রোববার, ২৩শে মে ২০২১ ইংরেজি
মোঃ হাসান মিয়াঃ
কুষ্টিয়ার কুমারখালিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’দল গ্রামবাসীর মধ্যে ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ চলমান রয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশি অভিযান ও টহল অব্যাহত রয়েছে। আর সেই পুলিশ আতঙ্কে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের পুরুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ঘটনাটি উপজেলার নন্দনালপুর ইউনিয়নের দড়িকমলপুর ব্রিজ এলাকায় ঘটেছে।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে পুরুষশূন্য পরিবারের নারীরা জানান, প্রায় তিন বছর আগে সাবেক মেম্বার আতর আলী বিশ্বাস ও বর্তমান মেম্বার ওয়াদুদ শেখ একসময় একই গ্রুপে ছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা আলাদা হয়ে যান। এরপর থেকেই যে কোনো তুচ্ছ ঘটনায় শেখ ও বিশ্বাস গ্রুপের সমর্থকরা ঢাল, সরকি, লাঠি, দা, রাম দা, ইটসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে একে অপরের উপর।
এরই জেরে গত ১৭ই মে শেখ গ্রুপের হাসান খন্দকারকে (৭০) পিটিয়ে রক্তাক্ত করে বিশ্বাস গ্রুপের আলামিন, আনোয়ারসহ পাঁচজন। এ নিয়ে থানায় বিশ্বাস গ্রুপের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এরপর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে শুক্রবার রাতে দুই গ্রুপ ওই গ্রামের ব্রিজ এলাকায় দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই গ্রুপকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ততক্ষণে বিশ্বাস গ্রুপের সমর্থকরা শেখ গ্রুপের খন্দকার আশরাফ, তোফাজ্জেল, আশরাফ, মোফাজ্জেল, চুন্নুর ঘরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর চালায়।
এ বিষয়ে শেখ সমর্থিত খন্দকার আশরাফের স্ত্রী বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে দুই পক্ষের উত্তেজনা চলে আসছিল। এরই জেরে শুক্রবার রাতে বিশ্বাস গ্রুপের লোকজন আমাদের বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ঘরের বেড়া ভাঙচুর করে। তিনি আরও বলেন, সব সময় পুলিশ ঘোরাফেরা করছে। পুলিশের ভয়ে বাড়ির পুরুষেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। সবসময় ভয়ে থাকি। তারপর পুলিশ এসে ঝামেলা করছে।
বিশ্বাস সমর্থিত আলামিনের স্ত্রী বলেন, যে কোনো ঘটনা ঘটলেই বিশ্বাস গ্রুপের আতর মেম্বারের দোষ হয়। প্রতিপক্ষরা এসে বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পথে-ঘাটে আমাদের লোকজন পেলে ওরা মারধর করে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামের কোনো বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নাই, বাজার নাই, খাওয়া-দাওয়া খুব কষ্ট হচ্ছে। এরই মধ্যে রাত নেই, দিন নেই, সবসময় পুলিশ আসে। আমাদের হয়রানি করে।
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, কী নিয়ে দু'পক্ষ মারামারি করে, তা তারা নিজেই জানে না। যে কোনো বিষয় নিয়েই বিশ্বাস ও শেখ গ্রুপ লাঠি, ঢাল, সরকি নিয়ে মাঠে নামে। আগের ঘটনায় শেখ গ্রুপ একটি মামলা করেছে থানায়। এরপর শুক্রবার রাতে দুই গ্রুপ মুখোমুখি হলে পুলিশ খবর পেয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন
স্বত্ব © ২০২৪ তালাশটিভি২৪ www.talashtv24.com